ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মূল ৪ লেন যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
এলেঙ্গা থেকে রংপুরের মর্ডান মোড় পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেন সড়ক খুলে দেওয়ায় উত্তরের জেলাগুলোর যাত্রার সময় অন্তত ২ ঘণ্টা কমবে।
শুধু তাই নয়, সড়কপথে আসা যাত্রীরা যানজটের ভোগান্তির শিকার হবে না। ফলে এ অঞ্চলে শিল্প কলকারখানা স্থাপনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং পরিবহণ ব্যবস্থায় গতি আসবে।
সাসেক-২ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহসিন হাওলাদার জানান, ১৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে যানজটের কারণে স্বাভাবিক সময়ে যাত্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা এবং ঈদের সময় ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা লেগে যায়। তবে, রংপুর, বগুড়া ও গাইবান্ধা অংশে ৯৫% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ব্রিজ-কালভার্ট, আন্ডারপাস ও উড়াল সড়কের কিছু কাজ বাকি রয়েছে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি ও রংপুরের শঠিবাড়ি এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হওয়ায় কিছু অংশে কাজ এখনও চলমান। তবে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সব বিবেচনা করে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে শুক্রবার (২১ মার্চ) চার লেন সড়ক চালু করা হয়েছে।
সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (ITS), টোল প্লাজা, সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি গবেষণাগার নির্মাণ, এবং হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে। এসব কাজ ২০২৬ সালে শেষ হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সাসেক-২ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প ম্যানেজার নাশিদ হাসান সিরাজী জানান, রংপুর থেকে ঢাকার ৩২২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে স্বাভাবিক সময়ে যেখানে ১০ ঘণ্টা লাগত, এখন তা আরও কমে আসবে।
দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার মানুষের জন্যও এই চার লেন উন্মুক্ত হওয়ায় ভ্রমণ আরও সহজ হবে। ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেনও শিগগির চালু করা হবে।
হাটিকুমরুল-রংপুর চার লেন মহাসড়ক সম্পূর্ণ চালু হলে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে, শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং ঢাকামুখী মানুষের চাপ কমবে।
প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুনে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বন্যার কারণে বিলম্ব হওয়ায় এখন ২০২৬ সালের মধ্যে এটি সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।