২০২২ সাল থেকে দেশীয় খামারিদের দাবির কারণে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের মিয়ানমারের সঙ্গে গবাদিপশুর করিডোর বন্ধ রয়েছে। এই করিডোর দিয়ে আসা পশুর নির্দিষ্ট রাজস্ব দিয়ে ব্যবসায়ীরা সারাদেশে সরবরাহ দিত। কিন্তু পশুর এই বিট বা খাটাল বন্ধ থাকলেও চোরাইপথে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি,আলীকদম ও উখিয়ার সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান হয়ে আসছে।
গরু চোরাচালানের বর্তমানে সবচেয়ে বড় ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা। চোরাইপথে এসব গরু বৈধ করতে গর্জনিয়া বাজার ব্যবহার করা হচ্ছে।
২০০৫ সালে চোরাচালান রোধে শাহপরীরদ্বীপ জেটিঘাট দিয়ে মিয়ানমারের গবাদিপশুর করিডোর চালু করা হয়েছিল। এই করিডোর এবং নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা,হামিদা পাড়ার লেবুছড়িস্থ বিজিপির বিওপি সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় গবাদি পশুর বিট বা খাটাল পরিচালনার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়ালীর বাসিন্দা মোসলেহ উদ্দিন শাহীন। তিনি স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি।
আবেদনে মোসলেহ উদ্দিন শাহীন উল্লেখ করেছেন,বর্তমানে সীমান্ত দিয়ে অবাধে গবাদিপশু বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসছে। চোরাচালান হয়ে আসায় সরকার এতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চোরাচালানের কারণে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন হচ্ছে জানিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, বিট বা খাটাল অনুমতি দেওয়া হলে এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সরকার বিপুল রাজস্ব আয় করতে পারবে। পাশাপাশি চোরাচালান বন্ধ হয়ে আসবে।
পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন হাজারো গরু ঢুকছে। বেশিরভাগ গরু গর্জনিয়া বাজারে তোলা হয়। তবে কিছু গরু পাহাড়ি পথ বেয়ে ঈদগাঁও ও সদরের খরুলিয়া বাজার নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় গরু হিসেবে চালাতে চোরাকারবারিরা ইউনিয়ন পরিষদের কাগজপত্রও ব্যবহার করছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন,২০২৪ সালে ৩ লাখের বেশি গরু মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। পাচার হয়ে আসা গরুর মধ্যে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভারতের গরুও রয়েছে। এসব গরু গর্জনিয়া বাজার ঘুরে কক্সবাজার, ঈদগাঁও, চকরিয়া হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হচ্ছে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ১১টি গরু জব্দ করে বিপাকে পড়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসরুরুল হক। তিনি বলেন,‘চোরাকারবারিরা গরুগুলো ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য ছড়িয়েছে।
কয়েকদিন আগে ডাকাত শাহীন বাহিনীর অস্ত্র প্রশিক্ষক ভিকচান মিয়াকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে ওসি মাসরুরুল হক জানান,খুনসহ একাধিক মামলার আসামি ও ডাকাত বাহিনীর প্রধান শাহীনকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ও গর্জনিয়া ইউনিয়নে গরু চালানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গরু চোরাচালানকে কেন্দ্র করে অপরাধ বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন,‘ কোনটি বাংলাদেশি আর কোনটি মিয়ানমারের গরু পরখ করা কঠিন। পাচারকারীদের হাতে কাগজপত্র থাকে। তারপরও চোরাচালান হয়ে আসা পণ্য বা গরু ধরতে তাদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।