রমজানের প্রথম ৯ দিনেই ৪ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছেন পাবনার ঈশ্বরদীর চাষি শাহিনুজ্জামান শাহিন। পুরো মাসে আরও ৬ লাখ টাকার লেবু বিক্রির আশায় রয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে ১০ লাখ টাকার বেশি লেবু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশাবাদী এই সফল চাষি।
ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামে শাহিনুজ্জামানের লেবু বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় সতেজ লেবু। শ্রমিকরা ব্যস্ত সেগুলো সংগ্রহে। মাত্র ২ বছরের মধ্যে বাগানটি ফলন দিতে শুরু করেছে।
শাহিনুজ্জামান জানান, তার দশ বিঘা জমির বাগানে ১ হাজার চায়না-থ্রি ও দেশি কাগজি লেবু চাষ করা হয়েছে। এই বাগান ১৫ বছর ধরে ফলন দেবে। লেবুর পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে মরিচ, কলা, কাকরসহ বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করেছেন তিনি।
লেবু চাষি শাহিনুজ্জামান শাহিন সাহাপুরের মহাদেবপুর গ্রামের ইমান সরদারের ছেলে। লেবু চাষের পাশাপাশি তিনি পেঁয়াজ,গাজর,বেগুন, মুলা,কলা ও ক্যাপসিকাম চাষ করেন। এরই মধ্যে সফল চাষি হিসেবে ২০২৩ সালে কৃষিতে জাতীয় পদক অর্জন করেন।
স্থানীয় ডেইরি খামারি আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার গরুর খামার আছে। পাশাপাশি অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করি। শাহিনুজ্জামান ভাইয়ের লেবু বাগানে ভালো ফলন হয়েছে। লেবু চাষ সম্পর্কে তার কাছ থেকে পরামর্শ ও ধারণা নিচ্ছি। আমার মতো অনেকেই লেবু বাগান দেখতে ও পরামর্শ নিতে আসছেন। তার লেবু চাষের সফলতা এলাকার কৃষকদের মাঝে উৎসাহ জুগিয়েছে।
চাষি শাহিনুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘দশ বিঘা জমিতে ১ হাজার চায়না-থ্রি ও দেশি জাতের লেবু বাগান করেছি। রমজান মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৭ লক্ষ টাকার লেবু বিক্রি করেছি। আরও ৩ লক্ষ টাকার লেবু বিক্রির আশা আছে। সবমিলিয়ে এবার রমজানে ১০ লক্ষ টাকার লেবু বিক্রি হবে। পাশাপাশি চৈত্র ও বৈশাখ মাসে ২০-২৫ লক্ষ টাকার লেবু বিক্রি হতে পারে। বছরের অন্য আট মাসে ৩০ লক্ষ টাকাসহ বছরে মোট ৬০ লক্ষ টাকা বিক্রির আশা আছে।’
তিনি বলেন, ‘দশ বিঘা জমিতে লেবুর বাগান করতে খরচ হয়েছিল দেড় লক্ষ টাকা। বাগান পরিচর্যা, আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ ও শ্রমিক খরচে প্রতি বছর ব্যয় হয় প্রায় দেড় থেকে ২ লক্ষ টাকা। সাথী ফসল বিক্রি করে পরিচর্যার ব্যয় অনেকটাই ফেরত আসে। বাগানে চায়না-থ্রি ও দেশি কাগজি লেবু বেশি চাষ হয়েছে।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রহল্লাদ কুমার কুন্ডু বলেন, ‘মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন দেশে লেবুর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া এখানকার মাটি লেবু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। চায়না-থ্রি ও থাই লেবু উৎপাদনের পরিমাণ দেশি কাগজি লেবুর চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষ করে রমজান মাসে লেবুর চাহিদা অনেক বেশি থাকে।
তিনি বলেন, ‘খরাকালীন চৈত্র-বৈশাখে লেবুর চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেড়ে যায়। কৃষক শাহিনুজ্জামান শাহিনকে বিএডিসির সেচ বিভাগ থেকে সৌরশক্তি চালিত ডাগওয়েল (পাতকুয়া) সরবরাহ করায় খরা মৌসুমসহ কখনোই গাছে পানির সমস্যা হচ্ছে না। যে কারণে তিনি সব সময় ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হচ্ছেন।