পবিত্র মাহে রমজানে সেহরি-ইফতার দুই সময়ই পান্তাভাত খেয়েই রোজা রেখেছেন রকিবুল-লিলি দম্পতি ও তাদের দুই ছেলে। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার সল্লা চরপাড়া গ্রামের এই পরিবারটির চার সদস্যের মধ্যে তিনজনই শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। দারিদ্র্যের সঙ্গে প্রতিদিন যুদ্ধ করা পরিবারটি ঈদুল ফিতরের আনন্দের জন্য পুরোপুরি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল।
রকিবুল ছোটবেলায় পঙ্গুত্ব বরণ করেন। দুই বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে এক পা হারান, পরের বছর গলায় রাখা গামছায় আগুন লেগে তার ঘাড় ও গলা পুড়ে যায়। পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় তিনি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। দৈনিক মজুরির কাজ করতে গেলেও অন্য শ্রমিকদের তুলনায় তাকে কম পারিশ্রমিক দেওয়া হয়—কেউ কেউ তাকে কাজে নিতেও চান না।
তার দুই সন্তান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাদেরও কাজে নেয় না কেউ। ফলে স্ত্রী লিলি বেগমের গৃহস্থালির কাজই পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। কখনও কখনও তিনি স্বামীর সঙ্গে কাজ করলেও চারজনের খাবারের সংস্থান করা কঠিন হয়ে পড়ে।
অভাবের কারণে পুরো রমজান মাসই রকিবুল-লিলি দম্পতির সেহরি ও ইফতারের একমাত্র খাবার ছিল পান্তাভাত। তারা জানালেন, গ্রামের মসজিদের আজানের ধ্বনি শুনে পান্তাভাত ও ডালের বড়া দিয়ে ইফতার করেন, একই খাবার খান সেহরিতে।
গণমাধ্যমে তাদের দুর্দশার খবর প্রচারের পর অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খায়রুল ইসলাম সরকারি সহায়তা হিসেবে ৫০ কেজি চাল, চিনি, তেল, লবণ, মুড়ি, পেঁয়াজ, রসুন, সেমাই, গুঁড়ো দুধ, বিভিন্ন ধরনের মসলা এবং নগদ পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকেই তাদের নগদ অনুদান দিয়েছেন।
রকিবুল বলেন, "ভিক্ষা নয়, আমি পরিশ্রম করে জীবন চালাতে চাই। কিন্তু আমার বসে থাকার কাজ ছাড়া কিছু করার সামর্থ্য নেই। তাই সরকারের কাছে একটি ছোট দোকানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানাই।"
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, "পরিবারটির দুর্দশার কথা জানতে পেরে ঈদ উপহার দিয়েছি। তাদের জন্য একটি স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করার পরিকল্পনা আছে।"