দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানোর প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একদিকে পরিবেশের বিপর্যয়, অন্যদিকে কৃষিতে উৎপাদন কমে যাওয়ার পরও দিনের পর দিন এই গাছের রোপণ থামছে না। সড়ক ও কৃষি জমির চারপাশে এই গাছগুলো দ্রুত বেড়ে উঠছে, যা পরিবেশ ও কৃষিজমির জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠছে।
২০০৮ সালে তৎকালীন সরকার ইউক্যালিপটাস গাছের চারা উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করলেও, এখনও তা লাগানোর প্রবণতা কমেনি। রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৫৮টি উপজেলার কৃষকরা বাড়তি আয়ের আশায় আবাদি জমি, বসতবাড়ি এবং পতিত জমিতে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগাচ্ছেন। তবে, এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে পরিবেশে, কারণ এই গাছ অতিমাত্রায় পানি শোষণ করে, ফলে পাশের কৃষি জমির ফলন কমে যাচ্ছে।
নাওডাঙ্গা এলাকার কৃষক সিমু মিয়া ও সনজু মিয়া বলেন, "ইউক্যালিপটাস গাছ লাগালে ক্ষতি হবে, এটা জানতাম না। তাড়াতাড়ি বড় হয়, তাই লাগিয়েছিলাম। এখন জমির আবাদ কমে গেছে।"
শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক করুনা কান্ত রায় ও তোফাজ্জল হোসেন জানান, "বনবিভাগ সড়কের পাশে গাছ লাগায়, কিন্তু জমির ফসল কমে গেছে।"
কৃষিবিদ ও প্রভাষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, "এতো ফলমূল ও ঔষধি গাছ থাকার পরেও বন বিভাগ সড়কের পাশে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগাচ্ছে। এই গাছ অতিমাত্রায় পানি শোষণ করে, যা কৃষিজমির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।"
উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. নবির উদ্দিন জানান, "আমরা ইউক্যালিপটাস গাছের উৎপাদন এবং বিপণনে নিরুৎসাহিত করছি। এই গাছের রোপণ বন্ধ করতে আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।"
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা: নিলুফা ইযাছমিন বলেন, "ইউক্যালিপটাস গাছ ফসলি জমির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই গাছের পাতা মাটির স্তর বিষাক্ত করে ফেলে, যা ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দেয়।"
রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শাহ মো. মিজানুর রহমান জানান, "ইউক্যালিপটাস গাছ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করছে। এই গাছের পাতায় পচন নেই, যা জমির পুষ্টি নষ্ট করে।"
তিনি বলেন, "বৃক্ষরোপণের বিষয়ে বন বিভাগের কাজ থাকলেও পরিবেশ রক্ষার্থে ইউক্যালিপটাস গাছ না লাগানোর জন্য বিভিন্ন সভা ও সেমিনারে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।"