ঢাকা শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে কক্সবাজারজুড়ে বিক্ষোভ, ৫ প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে কক্সবাজারজুড়ে বিক্ষোভ, ৫ প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর

ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে কক্সবাজারজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে এসব মিছিল জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ওইসময় কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় কেএফসি সহ ৫ টি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায় মিছিলকারীরা।

ভাংচুরের সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, 'ইজরায়েলি পণ্য রাখার অজুহাতে কেএফসি, পিৎজা হাটের পাশাপাশি কাঁচা লংকা, পানসি রেস্টুরেন্ট এবং মেরিন ফুড রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালানো হয়। এসময় কাচ লেগে কয়েকজন পর্যটক আহত হয়েছে।

“আমাদের ফিলিস্তিনের প্রতি সবসময় সংহতি রয়েছে। আজকের বিক্ষোভ মিছিলেও আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজন দ্বারা এমন ঘটনা কক্সবাজারের পর্যটনের জন্য অশনি সংকেত। আমরা ইসরায়েলের পণ্য যত সম্ভব বর্জন করছি। তারা যদি সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলতে বলতো তাহলে সুন্দর একটা সমাধান হতো। ভাঙচুর করে পর্যটকদের কেন আহত করা হল! আমরা প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।

জানা যায়, কক্সবাজারের উপজেলাগুলোতে স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালিত হয়। প্রত্যেকটি মিছিলে শত শত মানুষ অংশ নেন। তারা হাতে ‘ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়াও’, ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ করো’, ‘ইসরায়েলি সন্ত্রাস বন্ধ করো’ লেখা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার বহন করেন এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

এদিকে কক্সবাজার শহরে দুপুর ১২টার দিকে পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণের শহীদ দৌলত ময়দান থেকে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরেন।

কক্সবাজার পিৎজা হাটের ইনচার্জ পারভেজ মিয়া বলেন, মূলত কেএফসির ওপর মানুষের ক্ষোভ বেশি। তারা হঠাৎ মিছিল থেকে ইট পাটকেল মারা শুরু করে কেএফসি লক্ষ্য করে। তবে কেএফসি ওপরের ফ্লোরে হওয়ার এগুলো এসে পড়ে পিৎজা হাটে। আমাদের বেশকিছু কাঁচ এবং যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আপাতত রেস্টুরেন্ট বন্ধ রেখেছি।

কাঁচা লংকা রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ফিরোজ আহমেদ বলেন, রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ডে সেভেন আপের বিজ্ঞাপন ছিল। এই অজুহাতে আমাদের রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালানো হয়। আমরাও তো ফিলিস্তিনকে সাপোর্ট করি। আমাদের বললে আমরা সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলতাম। কেন রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালানো হলো!

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান জানিয়েছেন, পুলিশ মিছিলের আগে পিছে ছিল। মিছিলের দৈর্ঘ্য বেশ বেশি হওয়ায় মাঝখান থেকে কিছু অতি উৎসাহী মানুষ ইসরাইলে পণ্য রাখার অভিযোগে কয়েকটি রেস্টুরেন্টে পেপসির সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলেছে। কিছু দিল ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে তবে মিছিলে উপস্থিত মুরুব্বিরা তাদেরকে তৎক্ষণাৎ নিয়ন্ত্রণ করে।

উত্তাল পেকুয়া

গাজায় ইসরায়েল বাহিনীর গণহত্যা ও বর্বর চলমান হামলার প্রতিবাদে উত্তাল কক্সবাজারের পেকুয়া। সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে পেকুয়া বাজার থেকে একটি বিশাল মিছিল সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলেজ গেইট চৌমুহনী গিয়ে শেষ হয়। সেখানে চৌরাস্তা মোড়ে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন। জাতীয় ওলামা মাশায়েক (আইম্মা) পরিষদ ও সর্স্তরের তৌহিদী জনতার ব্যানারে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন। জাতীয় ওলামা মাশায়েক (আইম্মা) পরিষদ এর ক্বারী মনির উল্লাহ’র সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, পেকুয়া উপজেলা জামায়েত এর সেক্রেটারি নুরুল কবির, অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা নুরুজ্জামান মঞ্জু, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ পেকুয়া শাখার সভাপতি মাওলানা আলী আজগর, জামায়াত নেতা মাওলানা আলী আকবর, মুফতি বদিউল আলম, মাওলানা আজিজ উদ্দিন, মাওলানা ফরিদুল আলম, মাওলানা হাবিবউল্লাহ, মাওলানা নূর কাসেম ফারুকী, মাওলানা রুহুল আমিন, মাওলানা মিজানুর রহমান, মাওলানা সাজ্জাদুর রহমান, হেফাজত ইসলামের মাওলানা আবুল কাসেম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পেকুয়া প্রতিনিধি মাশরাফি ছরওয়ার হিরণ, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুফিদুল ইসলম, পেকুয়া উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি শাহাদাত মোস্তাফা নুরী প্রমুখ। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভায় বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ হেফাজত ইসলাম, আহলে সুন্নতে ওয়াল জামাত, পেকুয়া জন কল্যাণ সোসাইটি, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্নস্তরের তৌহিদী জনতা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা ফিলিস্তিনের উপর গণহত্যা, নির্যাতন নিপীড়ন, শিশু হত্যা বন্ধ ও ইসরায়েলের সকল পণ্য বয়কটের দাবি তুলেন। আলোচনা শেষে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের সকল মুসলিম উম্মাদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

রামুতে ওলামা পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল

কক্সবাজারের রামুতে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যা ও ভারতে বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল পাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রামু ওলামা পরিষদের উদ্যোগে সোমবার (৭ এপ্রিল) বাদ যোহর মিছিলটি রামু বাইপাস চত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌমুহনী চত্বরে বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা তাদের দাবির পক্ষে ঈমানদীপ্ত স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করেন। মিছিলোত্তর প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, পুণ্যভূমি ফিলিস্তিনের গাজায় জায়নবাদী ইহুদীবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলা পৃথিবীর ইতিহাসের সব নির্মমতার রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নারী, শিশুসহ হাজার হাজার মুসলমানদের হত্যা করে তারা গাজাকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে। তাদের এমন জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অপরদিকে ভারতের বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল পাসও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ ইসলামী ঐতিহ্য ও নিদর্শনের ওপরে হিন্দুত্ববাদী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার গভীর চক্রান্তের অংশ। এমতাবস্থায় ফিলিস্তিন ও ভারতসহ দেশে দেশে মজলুমানের সঙ্কট উত্তরণে জাতিসংঘ, ওআইসি, আরবলীগসহ বিশ্বসভাকে অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান, সেইসাথে মার্কিন, ইসরাইল ও ভারতীয় পণ্য বর্জন এবং তাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ভারতে বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল বাতিলের জোর দাবি জানান।

রামু ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মোহছেন শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মিছিলোত্তর সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, সংগঠনের উপদেষ্টা মাওলানা হাফেজ আব্দুল হক।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুরের সঞ্চালনায় এ সমাবেশে শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা হাফেজ শওকত আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাফেজ নিয়ামতুল্লাহ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক, মাওলানা আমিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হেফাজতুর রহমান, অর্থ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হান্নান, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা কাযী মোহাম্মদ এরশাদুল্লাহ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা হুমায়ুন কবির, সহ-ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক মাওলানা অলি উল্লাহ আরজু, ছাত্রনেতা মাওলানা আতিকুর রহমান প্রমুখ। সমাবেশে ওয়ায়েজ মাওলানা জসিম উদ্দিন, সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাফেজ ইয়াকুব, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শহীদুল্লাহ, সহ-দফতর সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক মাওলানা এজাজুল করিম শফি, ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আলমগীর রহমানী, সহ- তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ হোসাইনীসহ আলেম-ওলামা, তাওহিদী জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

ভাঙচুর,গণহত্যা,প্রতিবাদ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত