কক্সবাজারের রামু সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে আপারেজু বনবিট। এই বনবিট থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে শিলকুম পাহাড়। গত রোববার আলোচিত ওই গহীন অরণ্য থেকে মিলেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির পোশাক। এ ঘটনার পর তোলপাড় চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভ্যন্তরে। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, পাহাড়ি জনপদকে বৃহত্তর রামুসহ জেলার চোরাচালানি চক্র এই রুটকে ব্যবহার করে আসছিলো। এমনকি মিয়ানমারের আরাকান আর্মির লোকজনও নানা সময় পাহাড়ি পথে এসে অস্ত্র, মাদক সরবরাহ করেন চোরাচালানির হাতে। তারা বাংলাদেশ থেকে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যান।
আবার অনেকেই বলছে, চোরাচালানীদের নিরাপদ রুট শিলকুম পাহাড়। চোরাচালান ছিনতাইয়ের ঘটনাও সংঘটিত হয় এই পাহাড়ে। অনেকের ধারণা, চোরাচালান ছিনতাইয়ের সুবিধার জন্য আরাকান আর্মির পোশাকসহ বিভিন্ন বাহিনীর পোশাক ব্যবহার করত অপরাধীরা।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় কাঠুরিয়াসহ অনেকের সাথে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক কাঠুরিয়া দাবি করেন, রামু ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির মাঝামাঝি এলাকায় শিলকুম পাহাড়ে পথে আরাকান আর্মির পোশাক পড়ে লোকজন আনাগোনা করতে দেখেছেন। প্রায় সময় তাদের হাতে ভারি অস্ত্র দেখা যেতো। তার মতে, হয়ত অস্ত্র সহ মাদকদ্রব্য সরবরাহ করতে এসে ভোরের আলো ফুটে যাওয়ার কারণে তারা পোশাক গুলো রেখে গেছেন। তাদের মতে, আরাকান আর্মির লোকজন বাংলাদেশ থেকে খাদ্যদ্রব্যও নিয়ে যান।
অন্যদিকে অপর এক সূত্র বলছে, সীমান্ত বাহিনী লোকজনের চোখ ফাঁকি দিতে স্থানীয় চোরাচালানি চক্র আরাকান আর্মির পোশাক পড়ে মাদক পাচার, পাহাড়ি জনপদে বিভিন্ন নাশকতা কর্মকাণ্ড জড়িত থাকতে পারেন।
সামাজিক বনায়নে স্থানীয় কয়েকজন পাহারাদার জানান, গেল পবিত্র রমজান মাসে শিলকুম পাহাড়ে চারবারের অধিক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। রাত বাড়লে ওই স্থানে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। তাদের ধারণা, মাদকসহ চোরাই পণ্য ছিনিয়ে নিতে হয়ত, অপরাধী চক্র গুলি চালায়। সর্বশেষ গত শবে বরাতের গভীর রাতেও গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
আরাকান আর্মির পোশাক উদ্ধারে অংশ নেয়া আপরারেজু বনবিট কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন বলেন, গত রোববার শিলকুম গহীন পাহাড়ে বনের কাজে গিয়ে আরাকান আর্মির পোশাকাদি পাওয়া যায়। ওই স্থানে খন্ড খন্ড বর্ডার গার্ড বিজিবি ও সেনাবাহিনীর পোশাক পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ওই দিনের অভিযানে আরাকান আর্মির ইউনিফর্ম ও জুতাসহ একটি টর্চ লাইট উদ্ধার করা হয় বলে জানান এই কর্মকর্তা।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ( এসিএফ) ও রাজারকুল রেঞ্জের দায়িত্বরত রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. অভিউজ্জামান আরাকান আর্মির পোশাক উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শিলকুম পাহাড়ি এলাকাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকটা দিনের বেলায় যাওয়াও কঠিন। তবুও বন রক্ষার্থে বনকর্মীসহ স্থানীয় উপকারভোগীরা কাজ করে যাচ্ছেন। খন্ড খন্ড বিজিবি ও সেনাবাহিনীর পোশাক দেখতে পাওয়ার বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবগত করেছেন বলে দাবি করেন।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন, বনবিভাগের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাস্থলটি কিছু অংশ রামু হলেও বেশিরভাগই নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায়। তবুও বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর রাখছি। সহসাই ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি চক্র শিলকুম পাহাড়ি এলাকাকে চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন, বলে সংবাদ পেয়েছি। স্থানীয় কয়েকজন চোরাচালান চক্রের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।