পাবনায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক, মেলামাইন ও স্টিলের তৈরি পণ্যের দাপটে ঐতিহ্যের বৈশাখী মেলার সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎ শিল্প, বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী। মুখ থুবড়ে পড়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব কুটির শিল্প। অপরদিকে এসব পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় ২ হাজার পরিবার আর্থিক সংকটে জীবন-যাপন করছে।
পাবনার ৯টি উপজেলায় এ শিল্পের প্রায় ২ হাজার কারিগর। ব্যবসা মন্দার কারণে পেশায় টিকতে না পেরে তারা এখন অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন। পুঁজি স্বল্পতা, আর্থিক অসচ্ছলতা ও উপকরণের অভাবও এর জন্য দায়ী বলে দাবি করেছেন অনেকে।
একসময় প্রতি বছর বৈশাখ মাসকে ঘিরে বাঁশের তৈরি কুলা, ঝুড়ি, চাটাই, হাঁস মুরগির খাঁচা, বেতের চেয়ার, ধামা, চালুনি, ঢুলি, খলাই, হাত পাখা এবং মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, থালাসহ নানা ধরনের খেলনার ব্যাপক প্রচলন ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টক, মেলামাইন ও স্টিলের তেরি বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, বাঁশ ও মাটির তৈরি জিনিসগুলো বিলুপ্তির পথে। অথচ এক সময় পাবনার চাটমোহর, ঈশ্বরদী, বেড়া, আটঘরিয়া ও সুজানগর উপজেলার পাল পাড়াতে মাটির হাঁড়ি-পাতিল, থালা কলসি, জগ, গ্লাস, চাড়ি, মুড়ি ভাজার পাতিলসহ নানা আসবাবপত্র এবং বিভিন্ন খেলনা তৈরিতে এসময় ব্যস্ততা বেড়ে যেত কারিগরদের।
পাবনার বেড়া উপজেলার সালিনা গ্রামের বেত ও বাঁশ শিল্পের প্রদীব হাওলাদার জানান, প্রতি বছর বৈশাখ মাসকে ঘিরেই আমাদের ব্যবসা হতো। কিন্তু এখন আগের মত বৈশাখী মেলা হয় না। ফলে ব্যবসা নাই বললেই চলে। তবে আদি পেশা তাই ধরে রেখেছি। আটঘরিয়ার বেত শিল্পের কারিগররাও এখন অন্য পেশায় ঝুকছেন বলে জানান।
চাটমোহরের মৃৎ শিল্প কারিগর অনিল কুমার পাল জানান, বৈশাখ মাসকে ঘিরে মূলত আমাদের ব্যবসা হয়। এটা আমাদের সিজন বলা চলে। কিন্তু ঐতিহ্যের বৈশাখী মেলাই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। আগেরমতো আর হয় না। ঈশ্বরদীর মুলাডলির মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িতরাও একই কথা বলেন।
আবহমান গ্রাম বাংলার এ ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে সরকারের পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।