পাবনার ঈশ্বরদী পৌর এলাকার মশুড়িয়া পাড়ার মো. মিজানুর রহমানের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক শিমুল কৃষি ডিপ্লোমা পাশ করেছেন। পড়াশোনা শেষ করে এক রকমের বেকার ছিলেন। একজনের পরামর্শে বেকারত্ব ঘুচাতে প্রথম দিকে তিনি মুড়ি তৈরির চালের ব্যবসা শুরু করেন। বেশ কিছুদিন চালের ব্যবসায় জড়িত থাকার পর তার মাথায় উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা আসে। শিমুল ভাবেন এক সময় আমি বেকার ছিলাম। বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচা দায়। উদ্যোক্তা হতে পারলে বেকারদের কর্মসংস্থান করা সম্ভব। মুড়ির চাল বিক্রির পাশাপাশি তিনি মুড়ির ফ্যাক্টরি তৈরি করেন। সুপার মুড়ির ফ্যাক্টরি তৈরি করার পর শিমুলকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমান্বয়ে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন। শিমুলের ফ্যাক্টরিতে বেশ কয়েক ধরনের মুড়ি তৈরি হয়। এই মুড়ির স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কোন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়াই চাল, পানি এবং লবণ দিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি করেন সুস্বাদু মুড়ি। এখন বেকারত্ব ঘুচিয়ে শিমুল হয়েছেন উদ্যোক্তা। শিমুলের মুড়ি ফ্যাক্টরিতে নারী-পুরুষ ও প্রতিবন্ধী মিলিয়ে ৫০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন।
শিমুল বলেন, ডিপ্লোমা পাশ করে এক রকমের বেকার ছিলাম। চাকরি না পেয়ে ভাবছিলাম কি করবো। কি করে সংসার চলবে। একদিন এক বড় ভাই মুড়ির চাল বিক্রি করার পরামর্শ দেন। তার কথামতো বেশ কিছুদিন মুড়ির চাল বিক্রি করতে থাকি। একদিন অবসরে ভাবতে থাকি কি করলে উদ্যোক্তা হওয়া যাবে এবং বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। হঠাৎ মাথায় মুড়ি তৈরির ফ্যাক্টরি করার ভাবনা চলে আসে। এরপর বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নিয়ে মুড়ির ফ্যাক্টরি গড়ে তুলি।
শিমুল আরও বলেন, আমার ফ্যাক্টরিতে কোন রকম রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না। মুড়ি খেতে মচমচে এবং সুস্বাদু। বাজারে এই মুড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মুড়ির ফ্যাক্টরি তৈরি করার পর প্রায় ৫০ জন বেকার ছেলে-মেয়ে এবং প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এখন ভাবতে বেশ আনন্দ লাগে। আমার মতো একজন ক্ষুদ্র মানুষ ৫০ জন বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। শিক্ষিত বেকার যুবকেরা সোনার হরিণ নামক চাকরির পেছনে হন্য হয়ে না ঘুরে উদ্যোক্তা হলে নিজে যেমনি লাভবান হবে ঠিক তেমনি ভাবে বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। আগামীতে আমার চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারি-বেসরকারি যে কোন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেলে আরও বড় পরিসরে মুড়ির ফ্যাক্টরি তৈরি করে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো।
ঈশ্বরদী বাজারের মুড়ি বিক্রেতা আফজাল হোসেন বলেন, বাজারে অনেক ধরনের মুড়ি পাওয়া যায়। শিমুলের ফ্যাক্টরির মুড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। রাসায়নিক দ্রব্য না দেয়ায় এই মুড়ি সুস্বাদু মচমচে এবং মজাদার। এবার রমজান মাসে শিমুলের ফ্যাক্টরির প্রচুর মুড়ি বিক্রি করেছি। শেষের দিকে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী মুড়ি সাপ্লাই দিতে পারিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাস বলেন, শিমুলদের মতো শিক্ষিত যুবকেরা উদ্যোক্তা হয়েছে বিধায় কিছুটা হলেও বেকারত্ব কমেছে। শিমুল পড়াশোনা শেষ করে মুড়ি ফ্যাক্টরি গড়ে তোলায় সেখানে ৫০ জন নারী-পুরুষ ও প্রতিবন্ধীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। শিমুলের দেখাদেখি অন্যান্য শিক্ষিত যুবকেরা উদ্যোক্তা হয়ে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে দেশে বেকারত্ব অনেকাংশে কমে যাবে। শিমুল তার এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে আগামীতে ব্যবসায় আরও ভালো করবে। আমি তার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল ও ব্যবসায়িক সফলতা কামনা করছি।