ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঝুঁকি নিয়ে চলছে সিএনজি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঝুঁকি নিয়ে চলছে সিএনজি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক সিএনজিচালিত অটোরিকশায় জ্বালানি হিসেবে বোতলজাত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে উঁচুনীচু রাস্তায় ঝাঁকির কারণে এসব বোতলের রেগুলেটর ঢিলা বা ছিদ্র হয়ে যখন তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মেয়োদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিস্ফোরণেও ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- অটোরিকশায় বোতালজাত গ্যাসের ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যাত্রীদের নিরাপত্তায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র সংরক্ষণের পরামর্শ ফায়ার সার্ভিসের।

জানা গেছে, জেলায় গত দশ বছর ধরে অল্প ভাড়ায় দ্রুত যাতায়াতের অন্যতম বাহন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কাছের কিংবা দূরের যাত্রায় মানুষের কাছে জনপ্রিয় তিন চাকার বাহনটি। তবে পেট্রোলিয়ম গ্যাস ব্যবহৃত বাহনটিতে নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাহনটির পেছনের অংশে অথবা সিটের নিচে গ্যাসের বোতল রেখেই যাত্রী পরিবহণ করা হচ্ছে। এতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছেন সববয়সী মানুষ।

সিএনজিচালকরা জানান, নতুন করে বাজারে যেসব সিএনজিচালিত অটোরিকশা উঠছে, সেগুলোয় মানসম্মত গ্যাসের বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এখনও পুরাতন সব গাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাসের বোতল। এছাড়া অনেক চালক পুরাতন গ্যাসের বোতলকে রং করে অনভিজ্ঞ কারিগরের কাছে গিয়ে স্থায়ীভাবে গ্যাসের চেম্বার বানিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজিচালক বলেন, নতুন করে যেসব গাড়ি এখন রাস্তায় নামছে সেগুলোয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। একেবারেই নেই তা বলা যাবে না। কারণ সেগুলোর সিলিন্ডার অনেক মজবুত। তবে আগের গাড়িগুলোয় এখনও বোতলজাত গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন চালক গ্যাসের বোতল পেছনে রাখছেন। আবার কেউ ঝাল দিয়ে সিটের নিচেই স্থায়ীভাবে বসিয়ে নিচ্ছেন। এতে যাত্রীদের ঝুঁকি আছে ঠিকই, কিন্তু আমাদেরও তো কিছু করে খেতে হবে। এ গাড়িতেই গন্তব্যে যেতে যাত্রীদেরও চাহিদা আছে। তাই তারা যাতায়াত করছেন।

সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নিয়মিত যাতায়াত করা যাত্রীরাও দুর্ঘটনা নিয়ে থাকেন উৎকণ্ঠায়। তবে দ্রুতগামী বাহন আর অল্প ভাড়ায় গন্তব্যে যাওয়া যায় বলে নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা।

রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা শোনা যায়। এসব ভাবলে যে কারোরই ভেতরে ভয় কাজ করবে। তবুও কাজের সুবাদে যাতায়াত করতেই হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেসবাউল হক মারুফ বলেন, আমাদের সংগঠনে প্রায় দেড়শ সিএনজি আছে। এছাড়াও জেলায় রয়েছে আরও দুটি সিএনজির সমিতি। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ শতাধিক সিএনজি জেলাজুড়ে যাত্রী পরিষেবা দিয়ে থাকে। এসব অটোরিকশার মধ্যে বেশিরভাগই সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এখনও অনেক গাড়িতে বোতলজাত গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছিলাম। তাদের সচেতনতামূলক কথার মাধ্যমেই বোতলজাত গ্যাসের সিএনজির সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। তবে একেবারেই কমে যায়নি। আমারও বৈঠকের মাধ্যমে চালকদের নিয়মিত সচেতন করে থাকি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. শাহজামান হক বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়ম গ্যাস কিংবা সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বাহনগুলো উঁচু-নিচু, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় ঝাঁকির কারণে এসব বোতলের চাবি (রেগুলেটর) ঢিলা বা ছিদ্র হয়ে যখন-তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে সিএনজিচালক ও যাত্রীদের আরও সচেতন হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যানবাহনে গ্যাস ব্যবহারের অনুমতি আছে ঠিকই। কিন্তু গ্যাসের সিলিন্ডার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষা-নিরিক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তন করতে হয়। পরিবর্তন না করলে মেয়াদোত্তীর্ণ বোতল ব্যবহারে রয়েছে আরও ঝুঁকি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্যাসের সিলিন্ডার মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বা জোড়াতালি দেয়া হলে অথবা এতে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জামের (গ্যাস ভাল্ব, হোসপাইপ, রেগুলেটরসহ নানা ইকুইপমেন্ট) দুর্বলতার কারণে বিস্ফোরিত হতে পারে। এক্ষেত্রে চালকরা যাত্রীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র সংরক্ষণ করতে পারেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ,ঝুঁকি,সিএনজি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত