ঢাকা সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মশার দখলে চট্টগ্রাম মহানগরী, চসিক কর্মীদের দেখা নেই

মশার দখলে চট্টগ্রাম মহানগরী, চসিক কর্মীদের দেখা নেই

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম নগরীর লাখো বাসিন্দা। সন্ধ্যার পর বাসা বাড়িতে ঝাঁকে ঝাঁকে হানা দেয় মশা। ৬০ বর্গকিলোমিটারের নগরীতে কোথাও স্বস্তি নেই। বাসা বাড়িতে যেন জেঁকে বসেছে মশা। ১০ তলা ভবনের ৭/৮ তলায়ও মশার যন্ত্রণা। লোকজনের প্রশ্ন হঠাৎ করে এত মশা কোত্থেকে এলো। খোদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাও বলছেন, হঠাৎ বেড়েছে মশা। মশা নিয়ে আমরাও যন্ত্রণায় আছি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নগরীর ১৬শ কিলোমিটার ড্রেন একযোগে পরিষ্কার কাজ শুরু করেছে চসিক। এতে ড্রেনের ভেতর থাকা মশা বেরিয়ে আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বরাবরের মতো নগরবাসীর অভিযোগ,চসিক মশক নিধনে কিছু করছে না। অন্যদিকে চসিক বলছে,পরিচ্ছন্ন বিভাগ মশক নিধনে কাজ শুরু করেছে।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বিভাগের কর্মীদের সাথে বৈঠক করেন মেয়র। মশক নিধনে নানা দিক নির্দেশনা দেয়া হয় সেই বৈঠকে।

মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বৈঠকে বলেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া সাতদিন অনুপস্থিত থাকলে বরখাস্ত করা হবে। মশার হঠাৎ উৎপাত বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার আই ইউ এ চৌধুরী।

তিনি জানান, আসলেই মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। তবে মশক নিধনে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি মশার উপদ্রব কমবে।

এই মৌসুমে মশার উৎপাত কম থাকে। কিন্তু এত মশার এলো কিভাবে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, হঠাৎ মশার উৎপাত বেড়ে গেছে কথাটি সত্য। এর অন্যতম একটি কারণ পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য নগরীতে ড্রেনগুলো খোলা হচ্ছে একযোগে। এতে ড্রেনের ভেতর থাকা মশাগুলো বেরিয়ে এসে ছড়িয়ে পড়েছে। বাসা বাড়িতে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রবেশ করছে। আশা করছি ওয়ার্ড ভিত্তিক মশার ওষুধ তেল ছিটানো হবে। স্প্রে করা হবে বিভিন্ন স্থানে। এরপর মশার উৎপাত কমবে।

পরিচ্ছন্ন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে মশক নিধনে এখনই কোন ধরনের ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়নি। তবে কালো তেল এবং নানা ধরনের ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি স্প্রে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন পুরোনো মিলিয়ে ২৫০টি ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। স্প্রে করার মেশিনও আছে পর্যাপ্ত। আছে কালো তেল এবং ওষুধের যথেষ্ট মজুদ। তবে চসিক ওষুধ পর্যাপ্ত মজুদ থাকার কথা বললেও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, প্রতিদিন নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৮ থেকে ২০ লিটার করে কীটনাশক স্প্রে করলে পুরো নগরে ব্যবহার করতে বছরে ৩ লাখ লিটার কীটনাশক প্রয়োজন হবে। কিন্তু প্রতি বছর গড়ে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার লিটার কীটনাশক সংগ্রহ করে। এ কারণে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে মশক নিধনে ওষুধ স্প্রে করা সম্ভব হয় না। পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ‘এডাল্টিসাইড’ সংকট থেকেই গেছে।

তবে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার আই ইউ এ চৌধুরী বলেন, এডাল্টিসাইড পর্যাপ্ত মজুদ আছে। জোরদার স্প্রে শুরু হলে মশক নিধন কমবে। চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. সরফুল ইসলাম মাহি জানান, এখন ছড়িয়ে পড়া মশার সবগুলো কিউলেক্স মশা। মশক নিধনে ২৫ হাজার লিটার ওষুধ কেনার টেন্ডার করা হয়। সাড়ে ১২ হাজার লিটার সরবরাহ পৌঁছে গেছে। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে আগে দু’বেলা করে মশার ওষুধ ছিটাতাম। এখন তিনবেলা করে দিচ্ছি। আশা করছি মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে। খালে ড্রেনে বর্জ্যের কারণে মশার ওষুধ লার্ভা পর্যন্ত পৌঁছে না জানিয়ে তিনি বলেন, পানিতে লার্ভা থাকে। সেখানে ওষুধ পৌঁছালে মশার বংশ বিস্তার রোধ হয়। কিন্তু আবর্জনা বর্জ্যের কারণে ওষুধ ছিটানো হলেও অনেক সময় লার্ভা পর্যন্ত যেতে পারে না। তাই মশার ওষুধ ছিটালেও সবখানে সমান কার্যকর হয় না।

নগরীতে ১ হাজার ৬শ’ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে অন্তত ৫শ’ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কার হয়ে গেছে। বাকিগুলো দ্রুত পরিষ্কার করা হবে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। যা সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে জন্ম নেয় এবং তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বংশবিস্তার করে। সাধারণত বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই মশার বিস্তার হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে কিউলেক্স মশার উপদ্রবও বেড়ে যায়। চসিক মশা ধ্বংসের জন্য ২৫ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের সরবরাহ পৌঁছে গেছে।

নগরীর ষোলশহর সুন্নিয়া মাদ্রাসা এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, গত বছর দিনের বেলা এই সময়ে এত মশা দেখিনি। এবার রাতেতো উপদ্রব আছে। দিনের বেলা সূর্যের আলো থাকা অবস্থায় ঝাঁকে ঝাঁকে মশা বাসায় হানা দেয়। স্বাভাবিক জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। চসিক স্প্রে করার কথা বললেও কোন কর্মীকে গত দু’মাসে আমার এলাকায় দেখিনি। আসলে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার জন্য যত কারণ বলা হোক না কেন চসিক কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না।

নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি ব্লকের বাসিন্দা শামিম আক্তার বলেন, আমরা প্রতি বছর মাগরিবের পরেই জানালার নেট টেনে বন্ধ করে দিতাম। বছরের এই সময়ে খুব উৎপাত থাকতো না। এবার ভিন্ন পরিস্থিতি। আছরের নামাজের আগেই তিন তলা বাসার সবগুলো জানালার নেট বন্ধ করে দেই। তারপরও মশার তাণ্ডব থেকে রেহাই মিলছে না। মশক নিধনে কর্তৃপক্ষের অবহেলা আছে। না হলে নগরজুড়ে এভাবে পঙ্গপালের মতো মশার আক্রমণ হতো না।

নগরীর হামজারবাগ এলাকার বাসিন্দা নাঈম তুষার বলেন, মশার উৎপাত এতবেশি, দিনের বেলায় মশারি টাঙাতে হয়। ঘরের নিত্য কাজ করা,পড়ালেখা সব কাজেই ব্যাঘাত ঘটায় মশা। আমরা জানি ভবন যত উঁচু হবে মশার হানা তত কমবে। কারণ মশা নির্ধারিত উচ্চতার বেশি উড়তে পারে না। এখন দেখছি আট তলা ভবনের পঞ্চম তলায় বাসায় সন্ধ্যা নামলেই মশার দল হানা দেয়। কোথা থেকে এত মশা আসে বুঝতে পারি না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মশার এমন লাগামহীন উৎপাত মশক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতার চিত্রকেই স্পষ্ট করে তোলে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, নতুবা মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীর সহসা মুক্তি মিলবে না।

মশা,চট্টগ্রাম মহানগরী,চসিক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত