কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে নিজের তিন বছর বয়েসী মেয়ে সন্তানকে নিয়ে জেলা শহরে অটোরিকশাযোগে ফিরছিলেন সোহেল মিয়া (৩০)। পথে, কুলিয়ারচর উপজেলার রামদি ইউনিয়নের তাতারকান্দি এলাকায় তাকে শিশু অপহরণকারী আখ্যা দিয়ে অটোরিকশা থেকে নামায় স্থানীয় কিছু লোকজন। এ সময় মব সৃষ্টি করে সন্তানের সামনেই সোহেল মিয়াকে পিছন থেকে হাত বেঁধে বেধরক পেটাতে থাকে উপস্থিত প্রায় সবাই। পাশেই সোহেল মিয়ার মেয়ে সন্তান রাইসা বাবা বাবা বলে চিৎকার করলেও কেউ শোনেনি তার কথা।
ঘটনা চলাকালিন এদের মধ্যে কয়েকজন ভিডিও করে শিশুর অপহরণকারী শিরোনাম দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করতে থাকে। বিষয়টি দেখে স্থানীয় সচেতন কোন একজন কুলিয়ারচর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বাবা-মেয়েকে থানায় নিয়ে যায়।
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, "গতকাল রোববার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে থানায় ফোন আসলে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে সোহেল মিয়া ও তার সন্তানকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে যাচাই-বাছাই করে জানা যায় তার নিজেরই সন্তান। কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিলোনা তার। পরিবারের লোকজনকে খবর দিয়ে রাত নয়টার দিকে সোহেল মিয়া ও তার সন্তানকে হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।"
এ ঘটনায় সাধারণ ডায়রী মোতাবেক পুলিশ কোন পদক্ষেপ নিবে কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, "ঘটনাটি ভুল বুঝাবুঝির মাধ্যমে হয়েছে। জনগণতো জনগণই, বুঝেননা? কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দেওয়া উচিত। আইন নিজের হাতে তোলে নেওয়াতো অপরাধ।"
অপর আরেক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, "যারা আটক করেছে এবং এ ঘটনার সাথে যারা যারা জড়িত সবইকে আইনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা অব্যহত রেখেছে পুলিশ।"
ভুক্তভোগী সোহেল মিয়া কিশোরগঞ্জ পৌরসভা এলাকার হারুয়া সওদাগর পাড়ার বাসিন্দা।
সোহেল মিয়ার স্বজনেরা বলেন, সোহেলের সাথে প্রতিবেশী সাবিনা আক্তারের (২৫) বিয়ে হয় ১০ বছর আগে। এই দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে। কিছুদিন হয় সোহেলকে তালাক দিয়ে চলে যান সাবিনা। সন্তান রয়ে যায় বাবার কাছে। তিন বছর বয়সী রাইসা মায়ের কাছে যেতে অস্থির। কোন উপায় না পেয়ে রাইসাকে সঙ্গে নিয়েই সাবেক স্ত্রীর খোঁজে বের হয়েছিলেন সোহেল। ভৈরবে এক স্বজনের বাড়িতে রাইসার মা থাকতে পারেন ভেবে কয়েক দিন আগে রাইসাকে নিয়ে সেখানে যান সোহেল, কিন্তু তাঁকে পাননি। গতকাল ভৈরব থেকে বাড়ি ফেরার সময় আগরপুর বাসস্ট্যান্ডে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হন তিনি।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করার পর কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহত সোহেল মিয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েছিল পুলিশ। বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।