ভারত সরকার চিকিৎসা ভিসা বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশের অনেকেই ভারতের চিকিৎসাসেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীন সরকার বাংলাদেশে তিনটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে একটি হবে ১ হাজার শয্যার বিশ্বমানের হাসপাতাল। এটি সম্পূর্ণভাবে চীনের অর্থায়নে উপহার হিসেবে নির্মিত হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, হাসপাতাল নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী চর কলাগাছি এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা এবং ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদীসসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিনে প্রায় ২০ একর খাসজমি পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, “ভারত যেদিন চিকিৎসা ভিসা বন্ধ করলো, সেদিনই বাংলাদেশিদের সামনে স্বাস্থ্যখাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায়। রংপুরে হাসপাতাল স্থাপন এখন জনগণের যৌক্তিক দাবি।”
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য হানিফ খান সজীব জানান, রংপুর বিভাগে দেড় কোটিরও বেশি মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসা সেবার অভাব রয়েছে। হৃদরোগ বা ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য ঢাকা বা ভারতের ওপর নির্ভর করতে হয়, যা ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। তাই এই হাসপাতাল হবে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি যুগান্তকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে তিস্তা প্রকল্প সংলগ্ন এলাকায় অন্তত ১২ একর জমি চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে। সম্ভাব্য স্থান হিসেবে রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও পঞ্চগড়ের মধ্যবর্তী অঞ্চল বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে জেলা ভিত্তিক দাবির তোড়জোড়।
নীলফামারীর ডিমলার বাসিন্দারা মানববন্ধন করে দাবি জানিয়েছেন—তাদের এলাকা তিনটি জেলার সংযোগস্থলে হওয়ায় সেখানে হাসপাতাল স্থাপন করলে সুবিধা পাবেন নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের অসংখ্য মানুষ।
এদিকে ঠাকুরগাঁওয়েও ১ হাজার শয্যার “চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ছাত্র-জনতা। রংপুরের পীরগঞ্জের শহীদ আবু সাইদের নামে হাসপাতালের নামকরণের দাবিও উঠেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার বাসিন্দারাই এখন নিজ নিজ এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে সোচ্চার। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য একটি ঐতিহাসিক অর্জন হবে। এর মাধ্যমে দেশের চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়বে, বিদেশনির্ভরতা কমবে এবং উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবনমান ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক কাজ চলছে, অচিরেই শুরু হতে পারে নির্মাণ কার্যক্রম।
আবা/এসএস