ঢাকা শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

খরস্রোতা ধরলা-বারোমাসিয়া'র বুক-এখন ফসলের মাঠ

সংকটে মৎস্যজীবীরা
খরস্রোতা ধরলা-বারোমাসিয়া'র বুক-এখন ফসলের মাঠ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার খরস্রোতা ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর বুকে এখন বইছে সবুজ ফসলের জোয়ার। এক সময় যে নদীগুলো ছিল প্রবল স্রোত ও প্রাণের উৎস, এখন তা রূপ নিয়েছে ফসলি মাঠে। চরভরাট হয়ে ওঠা এসব নদীর বুকজুড়ে বোরো ধান ও ভুট্টা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রান্তিক কৃষকরা। তবে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় জীবিকার সংকটে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চলজুড়ে বিস্তীর্ণ ফসলের সমারোহ। পায়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছেন মানুষ, কোথাও নেই প্রবাহমান জলের ছোঁয়া। এক সময় এই নদীগুলোর প্রবল স্রোতে ভয়ে থাকতেন তীরবর্তী মানুষ, সেই নদী এখন চরের দখলে।

তবে নদীগুলোর নাব্যতা হারানোর ফলে জীবিকা হারাচ্ছেন এলাকার মৎস্যজীবীরা। এক সময় যারা নদীতে নৌকা চালিয়ে মাছ ধরে সংসার চালাতেন, এখন তারা কাজের খোঁজে ছুটছেন অন্যত্র। আর নদীতে দেখা মিলছে না বোয়াল, রুই, কাতলা, টেংরা, ভেটকি কিংবা বৈরালির মতো প্রাকৃতিক মাছের। নদী হারিয়ে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে জীবন। কারও জন্য আশীর্বাদ, কারও জন্য বেদনা—এ যেন এক নদীর দুই কাহিনি।

কৃষকরা জানাচ্ছেন, গত ৮–১০ বছর ধরে ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর বুকসহ আশপাশের নীলকমল ও অন্যান্য নদীর চরে বোরো ও ভুট্টা চাষ করে আসছেন তারা। প্রতি বছরই মিলছে ভালো ফলন। তবে চলতি মৌসুমে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম না পেলে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।

সোনাইকাজী এলাকার কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, “এক সময় এই ধরলাই আমাদের সব কিছু গিলে খেয়েছিল। এখন সে নদীর বুকেই ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করছি। এ বছর ভালো ফলনের আশা করছি, প্রতি বিঘায় ২৮ থেকে ৩০ মণ ধান উঠবে।”

একই এলাকার কৃষক মকসেদ আলী ও মোন্নাফ আলী জানান, “আমরা প্রতি বছর ধরলা-বারোমাসিয়ায় তিন বিঘা বোরো ও দুই বিঘা ভুট্টা চাষ করি। ফসল ভালো হয়, তবে এবার খরচ বেশি হয়েছে। দাম না পেলে লোকসান হবে।”

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১০ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ধরলা-বারোমাসিয়া নদীর অববাহিকায় চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। পাশাপাশি ভুট্টা চাষ হয়েছে ২ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে, যার মধ্যে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর নদীর বুকজুড়ে। তিনি জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছরও ফলন ভালো হবে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন।


আবা/এসএস

ফসল,মাঠ,জীবিকা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত