কিশোরগঞ্জের দেড় হাজার বর্গকিলোমিটার দিগন্ত বিস্তৃত হাওরাঞ্চলে এখন যেদিকেই তাকানো যায়, সেদিকেই পাঁকা ধানের সোনারঙের ঝিলিক। বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। আবহাওয়া বৈরী না হলে চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে, আশা কৃষি বিভাগের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিলাবৃষ্টি এবং আগাম বন্যার শঙ্কায় ৮০ শতাংশ পাকলেই কাটতে হবে ধান। কৃষি বিভাগের এমন পরামর্শে প্রখর রোদের তাপ উপেক্ষা করেই বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কৃষকেরা।
ইতিমধ্যে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ৫০ শতাংশ ধান কাটা ভালোভাবে শেষ হয়েছে।
ধান কাটাই-মাড়াই-ঝড়াই করে রোদে শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজে কৃষকদের পাশাপাশি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন কৃষাণীরাও। তবে, নতুন ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ রয়েছে কৃষকদের।
নিকলী বড় হাওরের কৃষক জমির আলী বলেন, "প্রতি মণে আমাদের খরচ হয়েছে এক হাজার থেকে এগার'শ টাকা। এখন বিক্রি করছি সাড়ে নয়'শ টাকা। ধানের দামটা বাড়তি হলে আমাদের ভাল হতো।"
মিঠামইন হাওরের কৃষক কাদির মিয়া বলেন, "সারের দাম বেশি, ডিজেলের দাম বেশি। ধান উৎপাদন করতে আমাদের খরচ বেশি হচ্ছে। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে, বেপারীরাতো সে দাম দেয়না। বেপারীরা যাতে আমাদেরকে না ঠকাতে পারে, সরকার যদি সেটা দেখতো তাহলে আমাদের কৃষকের জন্য ভাল হতো।"
কাস্তে দিয়ে ধান কাটার পাশাপাশি পাঁকা ধান দ্রুত কাটতে ব্যবহার হচ্ছে সরকারের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের দেওয়া কম্বাইন্ড হারভেষ্টার। যা দিয়ে দ্রুত সময়ে জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছে কৃষক।
অষ্টগ্রাম হাওরের কৃষক মিছির আলী বলেন, "মেশিনে ধান কেটে বস্তা ভরে, একেবারে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। অল্প সময়ে হয়ে যাচ্ছে, বন্যা আসলেও কোন ক্ষতি হবেনা।"
ইটনা জিউলের হাওরের কৃষক আবদুর রহমান বলেন, "ধান কাটার মেশিন আমাদের এখানে আশাতে আমাদের উপকার হয়েছে। মেশিনে অনেক জমি কাটতে পারে, কামলা দিয়ে কাটলে আমাদের অনেক বেশি খরচ হতো, সময়ও বেশি লাগতো। মেশিনে অনেক উপকার হয়েছে।"
চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওরেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া বৈরী না হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এমনটাই আশা জেলা কৃষি বিভাগের।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাদিকুর রহমান বলেন, "হাওরের কৃষক ভাইদের জন্য পরামর্শ হলো, আপনাদের জমির ধান ৮০ ভাগ পাঁকলেই ধান কর্তন করুন। অন্যথায় অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এ মুহূর্তে জেলায় বোরো ফসলের অবস্থা খুবই চমৎকার, কোন রোগ বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ একদমই নেই। আবহাওয়া যদি প্রতিকূলে না যায়, বোরোর একটা বাম্পার ফলন হবে বলে আমরা আশাকরি।"
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে এবার কিশোরগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত বোরো ধান থেকে চালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।