চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার আবদুল আজিজ ওয়াক্ফ এস্টেটে দুই মুতাওয়াল্লির দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মহারাজপুর চৌধুরীপাড়া। সাবেক মুতাওয়াল্লি সেকান্দার রহমান চৌধুরী ওরফে জুবিন চৌধুরী এবং বর্তমান মুতাওয়াল্লি গোলাম ফারুক রুমির ভোগদখল নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ দুই পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এতে করে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জুবিন চৌধুরীর সমর্থক এবং গোলাম ফারুক রুমির সমর্থক মহারাজপুরের শিশা বাগানে মুখোমুখি অবস্থান নেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়দের গণ্যমান্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯২৫ সালে মরহুম আবদুল আজিজ চৌধুরী ৪৬৩ দশমিক ৬২ একর সম্পত্তি লিল্লাহে ওয়াক্ফ করেন। এর মধ্যে রয়েছে ধানী জমি, পুকুর, খাঁড়ি, বসতবাড়ি, আমবাগান ও মেহগনি গাছ। ওয়াক্ফ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্রমানুসারে মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত হচ্ছিল। সর্বশেষ ২০১৫ সালে নিয়মবহির্ভূতভাবে এ ওয়াক্ফ এস্টেটের মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত হন গোলাম ফারুক। এরপর থেকেই ওয়াক্ফ এস্টেট নিয়ে শুরু হয় অস্থিরতা।
বর্তমান মুতাওয়াল্লি গোলাম ফারুক রুমিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিযুক্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়াক্ফ প্রশাসক বিস্তারিত সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে সেকান্দার রহমান ওরফে জুবিন চৌধুরীকে অপসারণ করে আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে রিট করলে আপিল বিভাগ আমার পক্ষে রায় দেন। এরপর সেকান্দার রহমান পুনরায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ আদালতে ০৬/১৯ নং মিস আপিল করলে শুনানি শেষে আমার পক্ষে রায় হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে ৩৭৬০/২৩ নং সিভিল রিভিশন করলে তা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। আদালতে বারবার হেরে তিনি এখন অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন।
সাবেক মুতাওয়াল্লি সেকান্দার রহমান চৌধুরী ওরফে জুবিন চৌধুরী বলেন, গোলাম ফারুক অবৈধভাবে দখলে নেন আবদুল আজিজ ওয়াক্ফ এস্টেট। এরপর থেকে এস্টেটের নিয়ম অমান্য করে গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পদ লুণ্ঠন করছেন। লাখ লাখ টাকার গাছপালা চোখের সামনে কেটে বিনষ্ট করছেন। ইতিমধ্যে মুকুলিত আমগাছ, মেহগনিসহ শিশুগাছ কেটে ফেলেছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি এস্টেটের ভেতরের প্রায় ১৩টি আম গাছ, ১১টি মেহগনি ও ৮টি শিশু গাছ কেটে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। গাছগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা। গাছগুলো মরে যাচ্ছে এমন অজুহাতে কাটা হচ্ছে। অবৈধভাবে ওয়াক্ফ এস্টেট দখলে রেখে গত ১০ বছরে বিপুল গাছপালা বিক্রি করেছেন মুতাওয়াল্লি গোলাম ফারুক। তিনি পুরোপুরি বিধি উপেক্ষা করে মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত হন। সরকারি চাকরিজীবী হয়েও ওয়াক্ফ এস্টেটের সম্পত্তির ওপর রক্ষিত মূল্যবান গাছপালা কেটে বিক্রি করে তছরুপ করে চলেছেন তিনি।
অন্যদিকে বর্তমান মুতাওয়াল্লি গোলাম ফারুক রুমি বলেন, আমি স্বেচ্ছায় কোন গাছ কাটিনি। পুরাতন এই বাগানে ৭ বছরে ৪-৫টি গাছ মারা গেছে। সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। তবে ফাঁকা জায়গায় নতুন করে গাছ রোপণ করা হয়েছে। ওয়াক্ফ এস্টেটের দোতলা বাড়ির দরজা-জানালা সংস্কারের জন্য ২-৩টি মেহগনির গাছ কাটা হয়েছে। শুধু আমাকে হয়রানি করার জন্য নানা ধরনের ছলচাতুরি করা হচ্ছে। তিরি আরও বলেন, সেকান্দার রহমান চৌধুরী ওরফে জুবিন চৌধুরীর বয়স মাত্র ১ বছর হওয়ায় তার মা পারভীন চৌধুরীকে অভিভাবক নিযুক্ত করে মুতাওয়াল্লির দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বিধানমতে নাবালক এবং কোন মহিলা মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত হতে পারবেন না। দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে তিনি সেই দায়িত্বে থাকলেও ওয়ারিশদের কোন টাকা পরিশোধ করেননি। এরপর প্রায় ২ কোটি টাকায় একটি আমবাগান গোরস্তান কমিটির কাছে বিক্রি করেন। এছাড়া বারঘোরিয়া বিলের ১৮ বিঘা জমি প্রায় ২৫ লাখ টাকায় জালাল উদ্দিনের কাছে বিক্রি করেন।