ঢাকা সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সরিষাবাড়ীতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ গরিবের ট্রেন ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস

৩টি রেলস্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ, ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের যাত্রীরা
সরিষাবাড়ীতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ গরিবের ট্রেন ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ৭টি রেলস্টেশনের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৩টি রেলস্টেশনের সকল কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে এসব রেল স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের সাধারণ যাত্রীদের। এছাড়াও গরিবের ট্রেন নামে খ্যাত ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস মেইল (৭৫-৭৬) ট্রেনটিও বন্ধ হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে ময়মনসিংহ-ভূঞাপুর লাইনে চলাচল করা সকল যাত্রীদের প্রতিনিয়ত সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সরেজমিনে স্টেশনগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, চারদিক জনশূন্য, ভূতুড়ে পরিবেশ। স্টেশনের সব কক্ষই তালাবদ্ধ। নেই বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা। প্রতিটি রেলস্টেশনে একজন স্টেশন মাস্টার ও সহকারী মাস্টার এবং চারজন করে পয়েন্টম্যান থাকার কথা থাকলেও এসব স্টেশনে কেউ নেই। ফলে যাত্রীদের সহায়তা করা ও টিকিট কাটার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সরিষাবাড়ী উপজেলায় আন্তঃনগর যমুনা, অগ্নীবিনা ও জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস (বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ), চট্টগ্রাম মেইল ৩৭ আপ সহ মোট ৩ টি লোকাল ট্রেনসহ মোট ৬টি ট্রেন চলাচল করে। বন্ধ এসব রেল স্টেশনগুলোতে ২ টি লোকাল ট্রেন সামান্য সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি করলেও অন্য চারটি ট্রেন যাত্রা বিরতি করে না।

এ উপজেলায় ৭টি রেল স্টেশন রয়েছে। তার মধ্যে ১৮৯৯ সালের ব্রিটিশ শাসনামলে চালু হওয়া বাউসী, বয়ড়া ও নবনির্মিত শহীদ নগর বারই পটল স্টেশনে জনবল সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে সকল কার্যক্রম। বর্তমানে বন্ধ থাকা এসব স্টেশনে চলে ধান মাড়াই, খড় শুকানো, জুয়া মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। স্টেশন বন্ধ থাকায় চুরি ও পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সরঞ্জাম। এসব রেলস্টেশন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার ক্ষোভ জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এদিকে ময়মনসিংহ-জামালপুর-টাঙ্গাইল রেলপথে চলাচলকারী ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২০১২ সালের ৬ই জুলাই উদ্বোধন করা হয়। ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা জামালপুর-টাঙ্গাইলে চলাচলকারী ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস মেইল ট্রেনটি ইঞ্জিন সংকটের অজুহাতে গত বছর ২০২৪ সালের ২৮ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে ময়মনসিংহ হতে সরিষাবাড়ী-তারাকান্দি-ভুয়াপুর রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী।

ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ময়মনসিংহ থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে ময়মনসিংহের বিদ্যাগঞ্জ, পিয়ারপুর, জামালপুর জেলার নরুন্দি, নান্দিনা, জামালপুর টাউন রেলওয়ে স্টেশন, কেন্দুয়া বাজার, জাফরশাহী (ভাটারা), সরিষাবাড়ী, তারাকান্দি, জগন্নাথগঞ্জ পুরাতন ঘাট, শহীদনগর এবং টাঙ্গাইল জেলার হেমনগর, ভূঞাপুর ও ইব্রাহিমাবাদ (পূর্বের নাম বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব) রেলওয়ে স্টেশনে চলাচল করতো। এসব রুটে চলাচল কারী যাত্রীদের ট্রেনের ভাড়ার থেকে ২/৩ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাধ্য হয়ে অন্য যানবাহনে করে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। মানুষের এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে বন্ধ হয়ে যাওয়া ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফের চালুর দাবি জানান তারা।

একাধিক যাত্রী বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা এই রেল স্টেশনগুলো বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ‘ট্রেনে অন্য যানবাহনের থেকে কম ভাড়ায় যাতায়াত করা যায়। ট্রেন মূলত নিম্ন আয়ের মানুষদের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম। তাই এই জনগুরুত্বপূর্ণ ট্রেনটি বন্ধ থাকায় আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ চরম সংকটে পড়েছে। নিরাপদ ভ্রমণ হিসেবে ট্রেনে আমরা কম টাকায় যাতায়াত করি। সরকারের আমাদের যাতায়াতের কষ্টের বিষয়টির গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে কষ্ট লাঘব করার জন্য অতিদ্রুত এই ট্রেনটি চালুর দাবি জানাচ্ছি।

বন্ধ থাকা নবনির্মিত শহীদ নগর বারইপটল স্টেশন এলাকার নাজমুল হাসান, শাওন আহমেদ বলেন, স্ট্রেশনটি নির্মাণের পর স্টেশন মাস্টারসহ রেলের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী থাকতো। তাদের থাকার জন্য কোয়ার্টার আছে। তখন বেশ মুখরিত ছিল এই স্টেশনটি। তবে স্ট্রেশনটি উদ্বোধনের কয়েকদিন পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। রেল বিভাগের কোনো লোক নেই। ফলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত রেল ভবন, কোয়ার্টার ও স্টেশনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি, সরকারি আসবাবপত্র পরে পরে নষ্ট হচ্ছে।

বন্ধ থাকা বয়ড়া স্টেশনের ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এই বয়ড়া রেল স্ট্রেশন ছিল। এক সময় জনপ্রিয় ও জনসমাগম ছিল প্রচুর এই বয়ড়া স্টেশনে। তখন সকল ট্রেন যাত্রাবিরতি করতো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই স্টেশন বন্ধ থাকায় ও রেলওয়ের কোন লোক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে তালাবন্ধ অবস্থায় পরে আছে ঘরটি। আগের মত লোক আসে না। আগের মত ব্যবসা নেই। এখন বেচাকেনা নেই বললেই হয়।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের তত্ত্বাবধায়ক মোঃ নাজমুল হক খান বলেন, ইঞ্জিন সংকটের কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ধলেশ্বরী এক্সপ্রেসসহ ৩টি ট্রেন বন্ধ আছে। কবে নাগাদ বন্ধ এই ট্রেন গুলো চালু হবে সেটা আমরা বলতে পারবো না। বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।

ট্রেন,বন্ধ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত