বন,পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কক্সবাজার থেকে আনুমানিক ১২ হাজার একর বনভূমি উদ্ধার করে বনবিভাগকে দিয়ে দেয়ার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা তথাকথিত উন্নয়ন এবং ব্যক্তির স্বার্থে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছিল।
কক্সবাজারের কয়েকটি কাজ আমরা অগ্রাধিকার হিসেবে ধরেছি মন্তব্য করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কক্সবাজারের ৭ শত একরের একটা বন প্রশাসনকে, ১৫৫ একর বনের জায়গা নিয়ে একজন ব্যক্তির নামে স্থাপনা হচ্ছে। ২০ একর জমিতে ফুটবল ট্রেনিং সেন্টার হওয়া কথা ছিল। বেজাকে দেওয়ার জায়গায় চিংড়ি ঘের করা হয়েছে। সব নিয়ে নেয়া হবে।
কক্সবাজারের মানুষের অনেক দিনের দাবি বাঁকখালীকে দখল ও দূষণ মুক্ত করার এমন মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, আগে যখন পরিবেশ কর্মী ছিলাম এসেছিলাম। এখন এসেছি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের সাথে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলছে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে আইনি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, হাইকোর্ট থেকে স্থিতি অবস্থা নিয়ে আছে । এসব আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে।
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের পাশে নির্মাণ কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, যদি লাগাম টেনে ধরা না হয় তবে সাধারণ মানুষের সি বিচ ব্যক্তির সি বিচ বা প্রতিষ্ঠানের সি বিচ হয়ে যাবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, পরিবেশ সংকটাপন্ন (ইসিএ) এলাকায় কার প্রতিষ্ঠান আছে তা আমার দেখার বিষয় না। আমার কাজ ইসিএ এলাকায় অনুমোদন ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান আছে কিনা তা দেখা। অনুমোদন ছাড়া যার প্রতিষ্ঠান থাকবে তা উচ্ছেদ করা হবে। এ সময় তিনি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ৫১ একর উচ্ছেদ করা হবে বলে মন্তব্য করেন।
এর আগে, কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর দখল-দূষণ পর্যবেক্ষণ করে হতবাক হয়েছেন নৌ পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুই উপদেষ্টা কস্তুরাঘাট পৌঁছে বাঁকখালী নদীতীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা, নদীর তীরের প্যারাবন ধ্বংস,অপরিকল্পিত ড্রেজিং,পৌরসভার ময়লা আবর্জনার ভাগাড় সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
কস্তুরাঘাট পৌঁছে দুই উপদেষ্টা বাঁকখালী নদীর সীমানার মানচিত্র দেখেন। পরে সেখান থেকে তারা যান পেশকার পাড়ায়। সেখানে জোয়ার-ভাটার পানি আছে এবং ট্রলার ভিড়ে এমন স্থান দখলের দৃশ্য দেখে দুই উপদেষ্টা হতাশ হন।
এসময় শিগগিরই নদীর তীর দখলমুক্ত করা হবে জানিয়ে নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি বন্দর করবো, বাকিরা দখল করবে তা হয় না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে। নদীর নির্ধারিত সীমানা রয়েছে। যা গেজেট আকারে আছে। এর মধ্যে যারা দখল করে আছে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। তা না হলে উচ্ছেদ করা হবে। অনেক বছর ধরে এই দখল প্রক্রিয়া চলছে। নদী বন্দর করতে হলে নদী দরকার। নদীর তীর দখল উচ্ছেদ দ্রুত হবে। সরে যেতে আর সময় দেওয়া হবে না।
সেখান থেকে দুই উপদেষ্টা বাঁকখালী নদী মোহনার নুনিয়ারছড়ায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জেটি ঘাটে যান।
এরপর কক্সবাজার-মহেশখালী রুটে আনুষ্ঠানিক সী-ট্রাক উদ্বোধন করেন। ২৫০ যাত্রীর ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সী-ট্রাকটিতে করে বেলা ১২ টার দিকে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন মহেশখালীর উদ্দেশে যাত্রা করেন। মহেশখালীতে তিনি একটি সুধী সমাবেশে যোগদানের পর বিকেলে কক্সবাজার ফিরবেন বলে জানা গেছে।
এ সময় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাজমুল আহসান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন, পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দীন শাহীন, চট্টগ্রাম বন সার্কেলের বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম ও কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।