ঢাকা রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সী-ট্রাকে পিষ্ট নৌ-পথের মাফিয়া চক্র, মহেশখালীজুড়ে উচ্ছ্বাস

সী-ট্রাকে পিষ্ট নৌ-পথের মাফিয়া চক্র, মহেশখালীজুড়ে উচ্ছ্বাস

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর নৌ-ঘাটের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেয়েছে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মানুষ। মহেশখালী-কক্সবাজার নৌরুটে দ্বীপবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত সি-ট্রাক সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটে বহুলপ্রত্যাশিত সী-ট্রাকের বাণিজ্যিকভাবে উদ্বোধনের খবরে মহেশখালীর ঘরে ঘরে আনন্দের জোয়ার বইছে। এছাড়া এতে করে কমেছে নৌ-পথে মানুষের চলাচলের ঝুঁকি। বলা হচ্ছে, অনেকটা ঘাট সিন্ডিকেটের কবল থেকে মুক্তি মিলেছে দ্বীপবাসীর।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন পর্যটন মৌসুমে আদিনাথ মন্দিরসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে বাড়বে পর্যটকদের আগমন। এতে করে রাজস্ব পাবে সরকার।

দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর বাসিন্দা চার লাখ। চিকিৎসা, আদালত ও জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমসহ অধিকাংশ সরকারি–বেসরকারি সেবা নিতে সাগর পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার জেলা সদরে যেতে হয় এসব বাসিন্দাদের। এর মধ্যে গত ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা উত্তোলন এবং এই সংক্রান্ত মামলা–মোকদ্দমার প্রয়োজনে একটি বড় সংখ্যক বাসিন্দাকে প্রায় প্রতিদিন কক্সবাজারে সদরে যেতে হয়। কিন্তু এই যাতায়াতে নৌ ঘাটের যন্ত্রণায় এক সীমাহীন দুঃখ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে এই দ্বীপের বাসিন্দাদের।

এতকাল বোটের জন্য জেটিতে দীর্ঘ অপেক্ষা, বোটে উঠতে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিযোগিতা, রোগী পারাপারে প্রতিবন্ধকতা, নড়বড়ে জেটি, নাব্যতা সংকট, ঘাট কর্তৃপক্ষ ও বোট চালকদের হাতে লাঞ্ছনা, ঝড়–বৃষ্টির ভোগান্তি এবং জেটিতে রিকশা চালকদের দৌরাত্ম্যে মহেশখালীর মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিল না।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে এরশাদের সরকারের আমলে ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের মহেশখালী ঘাটের জেটি নির্মাণ করা হয়। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ২০০০ সালে ১০০ মিটারের আরেকটি নতুন জেটির সম্প্রসারণ করা। কিন্তু পলি জমে খাল ভরাট হতে থাকায় ভাটার সময় নৌযানে ওঠানামায় চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এরপর আর কোনো স্বস্তিদায়ক ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। তাই প্রায় ২৫ বছর ধরে ভাটায় কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এর মধ্যে গত পাঁচ বছরে দুই বা তিনবার পলি ড্রেজিং করা হয়। তাও এক মৌসুম শেষ না হতেই ভরাট হয়ে যায়। এটিই জেটি পারাপারে সবচেয়ে বড় দুর্ভোগের কারণ যাত্রীদের।

ঘাট কর্তৃপক্ষ থেকে জানা গেছে, গত মৌসুমে মহেশখালী জেটিঘাট সংলগ্ন খাল খনন করা হয়েছিল। কিন্তু গত বর্ষায় পলি জমে তা আবার ভরাট হয়ে গেছে। এতে গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে তীব্র নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাই ভাটার সময় ঘাটে ভিড়তে পারছে না স্পিডবোটসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান। তাই মূল নদীতেই নেমে ডিঙি নৌকায় চরম ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। বর্তমান শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় পূর্ণ ভাটায় ডিঙি নৌকাও চলছে না; তাই হাঁটু বা তারও বেশি কাদা মাড়িয়ে উঠতে হচ্ছে কূলে। অন্যদিকে নাব্যতা সংকটে ৬ নম্বর ঘাটেও ভিড়তে না পেরে নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাটে ভিড়ছে নৌযানগুলো। একইভাবে আদিনাথ জেটিও নাব্যতা সংকট ও জরাজীর্ণতায় যাত্রী পারাপারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে রোগী, নারী–শিশু ও বৃদ্ধদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঘাটের এই সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘবে প্রায় সময় নানা আন্দোলন ও প্রতিবাদ হয়। অবশেষে মহেশখালী নৌ-ঘাটে সী- ট্রাক চালু হল।

কক্সবাজার শহরে বসবাসরত, মহেশখালীর বাসিন্দা শাহেদ মিজান বলেন, 'সী-ট্রাক চালু হওয়ায় মহেশখালীর জনসাধারণের জীবনমান আরো সহজ ও উন্নত হবে।'

জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ সহজের ফলে চিরকালীন বহু দুর্ভোগ-হয়রানি কমে যাবে। এতে সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতি হবে। অন্যদিকে আদিনাথসহ মহেশখালী ভ্রমণে পর্যটকদের জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

সী-ট্রাক,মাফিয়া,মহেশখালী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত