ঢাকা ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তিনদিনের ছুটি কাটাতে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ভিড়

তিনদিনের ছুটি কাটাতে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ভিড়

করোনা দুর্যোগের আতংকে চলতি বছরে থার্টি ফার্স্ট নাইটের কোনো আয়োজন নেই। এরপরও বর্ষ বরণ ও বিদায়কে ঘিরে টানা তিনদিনের ছুটি কাটাতে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন লাখো পর্যটক। ইতোমধ্যে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট আগাম বুকিং হয়ে রয়েছে। বছরের শেষ সূর্যাস্থ দেখতে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি।

থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন না থাকলেও টইটম্বুর পর্যটকদের সেবা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্বপালন করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রাখা হয় অতিরিক্ত পুলিশও। পর্যটক হয়রানি রোধে পর্যটন স্পটগুলোকে সিসিটিভি ক্যামরার আওতায় আনা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে সমুদ্র সৈকতে। গোসল করাকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষার্থে সর্তক অবস্থায় রয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে পর্যটকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা।

নরসিংদী থেকে আসা পর্যটক মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, করোনা পরিস্থিতির পর দীর্ঘদিন কোথাও যাওয়া হয়নি। বছরের শেষ ও নতুন বছরের আগমনটা উপভোগ করতে বাড়ির সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। মিস্টি রোদে সৈকতে সাগরের ঢেউয়ে পরিবারসহ খুবই মজা করছি।

পর্যটনসেবী রিয়াদ ইফতেকার বলেন, বছরের শেষ সূর্যাস্তকে বিদায় জানাতে প্রতিবছর বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে এসে হাজির হয় লাখো পর্যটক। বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে বছরের শেষ দিনের ডুবন্ত সূর্যের রূপ অবলোকন করে নতুন বছরকে স্বাগতম জানান তারা। করোনা দূর্যোগকাল হওয়ার পর এবারও অতীতের মতোই ছুটে এসেছেন লাখো পর্যটক। বছরের শেষ ও শুরুর বন্ধনে টানা তিনদিন ছুুুটি পড়ায় সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট আগাম বুকিং হয়েছে।

কলাতলীর আবাসন সেবাদানকারি হোটেল মোহাম্মদীয়া গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর ইংরেজি পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয় সব হোটেল-মোটেল। কিন্তু এ বছর তা চোখে পড়ছে না। তবে হোটেল-মোটেলে রুম বুকিং আগের মতোই হয়েছে। পুরনোকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে সৈকত শহর কক্সবাজারে ২ লাখের অধিক পর্যটকের আগমন হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর তারকা হোটেলগুলোতে নানা আয়োজন থাকে। কিন্তু করোনা দূর্যোগের কারণে এ বছর কোনো আয়োজন নেই।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আতংকে এবার থার্টি ফার্স্ট নাইটের কোন অনুষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হয়নি। এসব অনুষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ লোকসমাগম হয়। শহরের চারটি তারকা হোটেল আভ্যন্তরীন অনুষ্ঠান আয়োজনে অনুমতি চেয়ে আবেদন দিয়েছিল। আমরা সে আবেদন ডিএসবির প্রতিবেদনের জন্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ডিএসবি পজিটিভ রিপোর্ট না দেয়ায় অনুষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হয়নি। আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। কোন হোটেল অনুমতি না পেয়েও অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসনের দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত হোটেল-মোটেল জোনে টহলে থাকবে।

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, ২০২০ সালটা একেবারেই ভিন্ন ভাবে গেছে। শুরু থেকে সবকিছুকে স্তিমিত করে বিদায় বেলাতেও আমাদের ঝিমিয়ে দিয়ে গেছে এবছরটি। তবে আগামী বছর মহামারি কাটিয়ে একটি সুন্দর বছর পাওয়ার প্রত্যাশা করছি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটক নিরাপত্তায় সৈকত এলাকায় পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ রেসকিউ টিম, ইভটিজিং কন্ট্রোল টিম, ড্রিংকিং জোন, দ্রুত চিকিৎসাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তায়। সৈকতে বীচ বাইক নিয়ে টহল অব্যাহত রেখেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। রয়েছে ৩টি বেসরকারি লাইফ গার্ড সংস্থার অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষিত লাইফগার্ড কর্মী। কন্ট্রোল রুম, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ পুরো সৈকতে পুলিশের নজরদারির আওতায় রয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। শীতকালকে পর্যটন মৌসুম হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই সুযোগ পেলেই ভ্রমণ পিপাসুরা সৈকত পাড়ে আসবেন এটা স্বাভাবিক। যেহেতু করোনাকাল চলছে সেহেতু ভ্রমণে আসা লোকজনকে সচেতন হয়ে চলতে হবে। সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র। বালিয়াড়িতে নামা বা পর্যটন স্পষ্ট গুলোতে হাটা পর্যটকদের করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতা মূলক মাইকিং ও প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত। সবাই আন্তরিক হলে পর্যটন ব্যবসা ঠিক রেখে করোনা রোধ সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকদের অনাকাঙ্খিত হয়রানির শিকার রোধে, পোষাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোষাকে এবং পর্যটক বেশে পুরুষ-মহিলা পুলিশের সংখ্যাও সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

পর্যটকের ভিড়
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত