অপব্যাখ্যায় ঘর ছাড়া, ভুল বুঝতে পেরে পরিবারে ফেরত

প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫:৩৪ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন সংস্করণ

সংগৃহীত

র‍্যাবের মহপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, হিজরতের নামে গৃহত্যাগ করা ৯ তরুণ-তরুণীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর উত্তরা র‍্যাব সদরদপ্তরে মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

র‍্যাব মহপরিচালক বলেন, ‘নবদিগন্তের পথে’ নামে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আবু বকর সিদ্দিক, ফয়সাল হোসেন, মো. ফারুক হোসেন, মো. আলিফ খান, মুফলিয়া আক্তার, তাজকিয়া তাবাসসুম, জান্নাতুল ফেরদৌস, রুনা আক্তার ও কানিজ ফাতিমা ইফতিকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ৯ জন তরুণ-তরুণীকে ফুলের শুভেচ্ছা ও বই উপহার দেওয়া হয়। এ সময় প্রত্যেককে নগদ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।  

তিনি বলেন, ডি-রেডিক্যালাইজেশন হল উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ ব্যক্তিকে চরমপন্থা থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং সামগ্রিকভাবে সহনীয় নীতি/মধ্যমপন্থায় উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়া। দেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি, নির্দেশনা ও আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে থাকে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী কঠোর অবস্থান তৈরি হয়। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে উগ্রবাদীদের সক্ষমতা কমে যায়। এমতাবস্থায়, জঙ্গিরা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে না। গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়, সহিংসতার উপকরণ সংগ্রহ করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তারা ফেরারী জীবনের অবসাদ থেকে বিষণ্নতায় ভোগে ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এভাবে ধীরে ধীরে জঙ্গিদের সক্ষমতা; শক্তি, জনবল হ্রাস পেতে থাকে। এরপর জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আত্মসমর্পণের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এভাবে প্রক্রিয়াগতভাবে সমূলে জঙ্গি উৎখাত করা হয়।

র‍্যাব মহপরিচালক বলেন, ২২ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৯ জন তরুণ-তরুণী ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কথিত হিজরতের জন্য একযোগে গৃহত্যাগ করেছিলেন। এ বিষয়ে তাদের পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা,  র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-৮ এর সহযোগিতায় গত ২৫ ডিসেম্বর তাদের র‌্যাবের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কাউন্সেলিং করা হয়। কাউন্সেলিং এ তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।  তারা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কথিত হিজরতের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একযোগে গৃহত্যাগ করেছিলেন।

তিনি বলেন, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মুসলিম নারী ও শিশুদের নির্যাতনের ভিডিও ও ছবি দেখে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। তারা ভিডিও এবং ছবির লিংকগুলো তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারের পাশাপাশি লাইক ও কমেন্ট করতেন। এদের মধ্যে একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা ওসব ভিডিও ও ছবি শেয়ার ও কমেন্ট করতের তাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতের। যারা তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করতেন তাদের নিয়ে ‘দুনিয়া কিয়ে মুসাফির’ নামে আরেকটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে। ওই গ্রুপে মোট ৯ জন সদস্য ছিলো।  তার মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। 

র‌্যাব ডিজি বলেন, তারা বিভিন্ন ইসলামিক ভিডিও পোস্ট করতেন এবং বিভিন্ন লেখকের বই ডাউনলোড করে গ্রুপে দিতেন। পরবর্তীতে অ্যাডমিন মাঝে মাঝে তাদের পড়াশোনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন। একপর্যায়ে তাদের নির্বিঘ্নে ধর্ম পালন করতে হলে সব ফেৎনা থেকে দূরে সরে গিয়ে পাহাড়ি এলাকায় নিরিবিলি পরিবেশে যেতে হবে এবং সেখানে গিয়ে ধর্ম পালন করার নির্দেশ কোরআন ও হাদিসে আছে মর্মে ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করতেন। ৯ জন সদস্যই হিজরত করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। তখন তারা গুগল ম্যাপ বিশ্লেষণ করে রাঙ্গামাটি পাহাড়ি এলাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী তারা গত ২২ ডিসেম্বর  বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৩ ডিসেম্বর  তারা চট্টগ্রামের একটি স্থানে একত্রিত হন। সেখান থেকে ওইদিনই বাসে করে রাঙ্গামাটি যান এবং সেখানে গিয়ে লোক সমাগম দেখে তারা হিজরতের জন্য অনুকূল কোন স্থান না পেয়ে চট্টগ্রামে ফেরত আসেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরদিন তারা সবাই বান্দরবান গিয়েও সুবিধাজনক স্থান না পেয়ে একই দিন আবারো চট্টগ্রাম ফেরত আসেন। সুবিধাজনক স্থান না পাওয়ায় চট্টগ্রাম এসে তারা পরবর্তীতে কি করবে সে বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। ইতোমধ্যে একজন নারী সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। এ সময় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম থেকে তাদের র‌্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্ন র‌্যাব ডিজি বলেন, সংগঠনের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে র‌্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।  ২০১৬ সালের হলি আর্টিজানে হামলা, আশুলিয়ার জঙ্গিবিরোধী অভিযান, ২০১৭ সালে সিলেটের আতিয়া মহল, মিরপুরের জঙ্গিবিরোধী অভিযান এবং ২০১৯ সালে মোহাম্মদপুরের জঙ্গিবিরোধী অভিযান উল্লেখযোগ্য।