ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘বিচার বিভাগ প্রজাতন্ত্রের হৃৎপিণ্ড, রাখতে হবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত’

‘বিচার বিভাগ প্রজাতন্ত্রের হৃৎপিণ্ড, রাখতে হবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত’

বিচার বিভাগ প্রজাতন্ত্রের হৃৎপিণ্ড উল্লেখ করে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে ব্যর্থ হলে জাতিকে খারাপ সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক। সংবিধানের রক্ষক। তাই বিচারকদের সাহসী ও সুবিচারক হতে হবে। বিচার বিভাগ যদি আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ বা পিছ পা হয় তাহলে রাষ্ট্র এবং নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। বিচার বিভাগ সংবিধানের আধিপত্য রক্ষার পাশাপাশি জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক। সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন সংরক্ষণ এবং সমাজের দুর্বল অংশের অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য।

বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়ে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেন, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে বিচার বিভাগকে মজবুত দেয়াল দিয়ে রক্ষা করার দায়িত্ব বিচারকদের, আইনজীবীদের এবং রাষ্ট্রের প্রত্যেক দায়িত্বশীল নাগরিকের। আমরা, আপনারা, সবাই সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সর্বনাশা দিনের জন্য প্রতিটি নাগরিকের অপেক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক বিভক্তি রাজপথ অতিক্রম করে বিচারালয় অভিমুখে ধাবিত হলে সেটা বিচারালয়ের জন্য মঙ্গলজনক হয় না। আমাদের মনে রাখতে হবে, আইনজীবীদের বিভক্তি ও মতভেদ এবং তার প্রতিক্রিয়া বিচারালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রাজনৈতিক মতাদর্শ রাজনৈতিকভাবে বাস্তবায়ন করলে এবং বিচারালয়কে নিরাপদ দূরত্বে রাখলে বিচার বিভাগ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যে মহান চিন্তা ও কল্যাণ চেতনাকে সন্নিবেশিত করে আমাদের সংবিধান প্রণীত হয়েছে, তার ধারক ও বাহক হিসেবে, দেশের সব আইন ও সব আইনগত কার্যক্রম সাংবিধানিক চেতনার প্রতিফলন নিশ্চিত করার সুমহান জাতীয় দায়িত্ব আমাদের সবার। মানুষ চায় শান্তি আর শান্তি কিন্তু পরিপূর্ণ শান্তির জন্য আমাদের এখনও অনেকটাই এগোতে হবে। আমাদের আঁকা-বাঁকা জায়গাগুলোকে সোজা করতে হবে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণ রেখে বিচার পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধানপ্রণেতারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেছেন-সে স্বাধীনতা কার্যকর করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গের এবং প্রতিটি নাগরিকের। সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ’৭১-এর রক্ত বৃথা যাবে। মনে রাখতে হবে জনগণের ঐক্যবদ্ধ বীরত্ব এবং সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দেশ, এই বিচারালয়কে পেয়েছি। ’৭১-এ জাতি চরম ত্যাগ স্বীকার করে স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছে। আমাদের জাতীয় দায়িত্ব হলো সর্বক্ষেত্রে সেই দেশকে এগিয়ে নেওয়া। আমরা ব্যর্থ হলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। আমাদের প্রতিটি আইনে মানবিকতার স্পর্শ থাকতে হবে। আইন যদি দরিদ্রকে পিষে দেয় আর ধনী ব্যক্তি যদি আইনকে পিষে দেয় তাহলে রাষ্ট্র এবং বিচার বিভাগ সঠিকভাবে চলছে এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচার বিভাগ অপরিহার্য। গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা আর বিচারকদের রাজনৈতিকভাবে বয়ে যাওয়া হাওয়া থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে, সংবিধান, আইন নিজেদের বিচারিক বিবেকের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে বিচার কার্য সমাধান করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় জনগণের অগাধ আস্থা স্থাপন করতে হবে এবং থাকতে হবে নইলে জনগণের অধিকার রক্ষা হবে না এবং স্বাধীনতাও বিপন্ন হবে। সব বিচারককে অসামান্য নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে, নইলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা শুধুমাত্র সংবিধানের ভেতরই আবদ্ধ থাকবে। ধন্য তারাই, যারা অন্তরে শুদ্ধ।

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি রাজনীতিবিদ আইনজীবীদেরকে অনুরোধ করব বিচারালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাষ্ট্র সৃষ্টিতে ত্যাগের কথা অন্তত ১০ বার ভাববেন, কারণ আপনাদের সিদ্ধান্তে ভুল হলে শেষ বিচারে তাতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়। ক্ষতি হয় বিচার বিভাগের। বিজ্ঞ আইনজীবীদের সেই শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে, যে শক্তি বিচারালয়কে দুর্বল করে, যে শক্তি গণতান্ত্রিক জীবন-যাপন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে জনগণের দৃষ্টি কিন্তু অতীব প্রখর। তাদের হৃদয় আছে, মন আছে, অনুভূতি আছে। আমরা কি করছি তারা সব কিছু বুঝতে পারে এবং তাদের বোঝার ক্ষমতা আছে। ন্যায়বিচার, মানবিকতাবোধ এবং আচরণ দিয়েই বিচারকদের বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে নিজেদের স্থান খোদাই করতে হবে।

প্রজাতন্ত্র,রাজনৈতিক,প্রভাবমুক্ত
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত