হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে করা মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার পর রায় ঘোষণা করা হয়।
মামলার রায় পর্যবেক্ষণে বলা হয়, হেফাজতের তাণ্ডবের মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে আদিলুর ও এলানের সংগঠন অধিকার বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ন করেছে।
এদিকে তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা মামলার রায় শুনতে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার পর্যবেক্ষকরা।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াতের আদালতে রায় দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন রায় প্রস্তুত না থাকায় আজকের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়।
তারও আগে গত ৩১ আগস্ট মামলার যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়। তবে রায় প্রস্তুত না হওয়ায় পেছানো হয়েছে রায়ের তারিখ। মামলার উভয় আসামিই জামিনে রয়েছেন।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেন সংগঠনটির নেতারা। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে দাবি করেছিল মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য, সেই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি।
শাপলা চত্বরে অভিযানের পর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ডিবির তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম।
তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করে।
আরও বলা হয়, তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করে, যা তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে ওই আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালায় এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়।