মেট্রোরেলের আদলে প্রস্তুত করা হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রধান ফটক। বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রথা অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত হয়ে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিইটিএফ) ২০২৩ এর উদ্বোধন করবেন।
তবে মেলায় অংশগ্রহণকারী বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই তাদের নিজস্ব সাজগোছের কাজ শেষ করতে পারেনি। শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে সেখানে।
ইপিবি সূত্র জানিয়েছে, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৯৯৫ সাল থেকে যৌথ উদ্যোগে মেলার আয়োজন করেছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় বাণিজ্যমেলা। সেবার বাণিজ্য মেলায় শিশুপার্ক ছিল না। এবার মিনি শিশুপার্ক থাকছে। ফুডকোর্ট নিচে চলে গেছে। এবারের আসরে আগের তুলনায় মেলায় স্টলের সংখ্যা বেড়েছে। মেলার প্রবেশদ্বারে মেট্রোরেলের আদলে দুটি গেট তৈরি করা হয়েছে। মেলায় স্টলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এ উপলক্ষে শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, এবারের বাণিজ্য মেলায় ১০টি দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আমাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। লাভের উদ্দেশ্যে এ মেলার আয়োজন করা হয় না। গতবছরও এ মেলায় দুইশত কোটি টাকা মূল্যে পণ্য রফতানির স্পট আদেশ পাওয়া গেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, স্থায়ী এক্সিবিশন সেন্টারে একটু দূরে হলেও মেলায় অংশগ্রহণকারী ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ মেলার মাধ্যমে আমরা আমাদের তৈরি পণ্য দেশি-বিদেশি সবার কাছে তুলে ধরার সুযোগ পাই। ক্রেতারাও দেশি-বিদেশি পণ্যের মধ্যে তুলনা করার সুযোগ পান। এতে পণ্যের মানও উন্নত হয়। বাংলাদেশে তৈণি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরাই এ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মূল উদ্দেশ্য। আমাদের পণ্যের মান উন্নত এবং মূল্য কম হওয়ার কারণে প্রতি বছর আমাদের রফতানি বাড়ছে। গতবছর মেলায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য রফতানির স্পট আদেশ পাওয়া গিয়েছিল। প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের পাশাপাশি আরও ১০টি পণ্য রফতানি বাড়ানোর বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আইসিটি খুবই সম্ভাবনাময় পণ্য, স্বল্পতম সময়ে এ খাতের রফতানি চার থেকে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে আশা করছি।
জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলায় স্টলের সংখ্যা বেড়েছে। মেলার আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, এবারের আসরে মেলায় দেশি-বিদেশি ৩৩১টি মেলার স্টল বসছে, যা গত বছরে ছিল ২২৫টি। মূলত করোনাসহ নানা কারণে গত বছর স্বল্প পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এবার সেই তুলনায় বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে।। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী মাঠ ছেড়ে গত বছরই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা চলে গেছে নতুন জায়গায়।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ও করোনার পর ব্যবসার পরিবেশ গত বছরের চেয়ে ভালো বলে এবার জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, শেরেবাংলা নগর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে বাণিজ্যমেলার পূর্বাচলের এই জায়গা। এবার দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিএফটিএফ) অনুষ্ঠিত হচ্ছে এখানে।
এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা আশা করছি গত বছরের তুলনায় এবছরের মেলা অপেক্ষাকৃত ভালো হবে। আমাদের প্রস্তুতিও ভালো। তবে শেরেবাংলা নগরের মতো বাণিজ্যমেলা জমতে সময় লাগবে। এর জন্য প্রচারণা দরকার। যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি হেলাল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলার পরিধি বেড়েছে। বেড়েছে অবয়বও। তবে সেভাবে বাড়েনি এর প্রচারণা। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার প্রচারণা বাড়াতে হবে। সহজ করতে হবে মেলাস্থলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। করোনা পরবর্তী বাণিজ্য মেলা এবছর অবশ্যই ভালো হবে। মেলায় বেশি মানুষের সমাগম হবে বলেও আশা করছি।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, মেলায় বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। এবারের আয়োজন ভালো। করোনা সংকট কাটিয়ে এবারের বাণিজ্যমেলা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। কারণ দেশের রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে বাণিজ্যমেলার অবদান অনেক। এদিকে মনোযোগ দিতে হবে। মেলাস্থলে দর্শক, ক্রেতা বিক্রেতাদের যাবতীয় সুবিধাদি নিশ্চিত করতে হবে। ভেন্যুটি নতুন হওয়ায় এর কিছুটা প্রচারণাও প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, করোনার কারণে ২০২১ সালে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো মেলা হয় এখানে।
১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর জানুয়ারির ১ তারিখ দেশের সরকারপ্রধান এ মেলার উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে মেলায় খাদ্যপণ্যের মান এবং মূল্যের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খাদ্য পণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট থাকবে। মেলায় যাতায়াতে যাতে কোনও ধরনের নিরাপত্তার ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য পুলিশ প্রশান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য গতবারের মতো সার্টেল সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকবে। কোড়িল বিশ্ব রোড হতে এক্সিবিশন সেন্টার পর্যন্ত প্রাথমিক ভাবে ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করবে, প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। বাসের ভাড়া ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মেলা চলাকালীন বাসগুলো চলাচল করবে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে, তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০ টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। এবারে মেলায় প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকেট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টের সুযোগ থাকবে। মেলায় প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মেলায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৭টি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি হলের বাইরে মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।