অর্থনীতিতে আশা জাগাচ্ছে রফতানি আয়

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:৪৩ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বড় দুই উৎস্য রফতানি বাণিজ্য এবং রেমিট্যান্স। বিদায়ি বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে রেমিট্যান্সে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এবার সুখবর এলো রফতানি বাণিজ্য থেকেও। ২০২২ সালের শেষ মাসে রেকর্ড ৫৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। সুতরাং রিজার্ভের পর রফতানি আয়েও আশা জাগাচ্ছে দেশের অর্থনীতিতে। রফতানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রফতানি বাণিজ্যে যাতে কোনো রকম বাধার সৃষ্টি না হয় সে জন্য কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে হবে। পাশাপাশি এলসি জটিলতা এবং বন্দরের সেবার মান বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তারা। 


লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে পণ্য রফতানি থেকে রেকর্ড আয় করেছে বাংলাদেশ। এ মাসে ৫৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা এক মাসের সর্বোচ্চ রফতানি আয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরেও ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। এ বছর নভেম্বরে প্রথমবারের মতো এক মাসের রফতানি আয় ৫০০ কোটির ঘর ছাড়ায়।


এই হিসাবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রফতানি আয় আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। ডিসেম্বরে ৫৪২ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল সরকার। তাতে রফতানির অর্জন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ০৩ শতাংশ পিছিয়ে থাকল।


রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল সোমবার হালনাগাদ যে রফতানি তথ্য প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ২ হাজার ৭৩১ কোটি ১২ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের রফতানি আয়ে মুখ্য ভূমিকা রেখে চলা তৈরি পোশাক খাত ডিসেম্বরেও ভালো করেছে। গত ছয় মাস মিলিয়ে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।


ছয় মাসে এ খাতে মোট রফতানি হয়েছে ২ হাজার ২৯৯ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের পণ্য। এর মধ্যে নিট পোশাক ১২৬৫ কোটি ৯৬ লাখ ডলার (১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) উভেন পোশাক ১ হাজার ৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার (১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) এসেছে।


এর বাইরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে ৬৩ কোটি ৭২ লাখ ডলারের, তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রফতানি হয়েছিল ৫৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।


পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে মাত্র ৪৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের; যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৫৯ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছিল। কৃষিপণ্য রফতানিও ২৩ দশমিক ২৬ শতাংশ কমেছে; এই খাত থেকে রফতানি হয়েছে ৫০ কোটি ১৯ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের ৬৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। 


রফতানি এই তিনটি খাত বছরের শেষে ১ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করতে পারে বলে বিভিন্ন সময় প্রক্কলন দেখিয়েছেন বিশ্লেষকরা। ছয় মাসে মোট ১০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির মাধ্যমে ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে প্লাস্টিক খাত। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রফতানি হয়েছিল ৭ কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য। 


রফতানি আয় বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান সময়ের আলোকে বলেন, মূলত তিন কারণে বেড়েছে রফতানি আয়। পোশাকের ইউনিট প্রাইস বেড়েছে, ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য রফতানি বেড়েছে এবং নতুন বাজারে পণ্য রফতানি বেড়েছে। এর সুফল এখন আমরা পাচ্ছি।


রফতানির এ নতুন রেকর্ডকে ‘মিরাকল’ বলছেন পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেছেন, গত দুই মাসে রফতানির জন্য ক্রয়াদেশ কম থাকার পরও বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ রফতানি হয়েছে, এটা শিল্প মালিকদের আশার আলো দেখাচ্ছে। যদিও আমাদের অবস্থা ভালো না, তবুও এটা আমাদের জন্য শুভ লক্ষণ। সারা বিশ্ব যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে আছে, সেখানে বাংলাদেশের রফতানির আশা দেখাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় অঙ্কের রফতানি অতীতে কখনো হয়নি। রফতানি আয় বাড়লে দেশের ডলার সংকটও কেটে যাবে। আগামী কয়েক মাসও রফতানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি থাকবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। তবে সে ক্ষেত্রে সরকারকে কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে হবে। অনেক কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে এবং বন্দরের নানা রকম জটিলতার কারণে পণ্য রফতানি বিঘ্ন ঘটছে। এসব সমস্যা দূর করতে সরকারকে আন্তরিকতার সঙ্গে দৃশ্যমান কাজ করতে হবে। 


রফতানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধির বিষয়ে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রেমিট্যান্সের পর রফতানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে অর্থনীতির জন্য স্বস্তির খবর। রফতানি বাড়লে রিজার্ভ বাড়বে, ডলারের বাজারে চলমান সংকট প্রশমিত হবে। সুতরাং রফতানি আয় যাতে আরও বাড়ে তার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিতে হবে উদ্যোক্তাদের। কারখানায় শিল্পের উৎপাদন যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।