ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হচ্ছে না পুঁজিবাজার
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৬ | অনলাইন সংস্করণ
অনলাইন স্নগস্করণ
পুঁজিবাজারের রুগ্ণ দশা কাটাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ কোনো কাজে আসছে না। লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে যেমন ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আবার লেনদেনও ৩০০ কোটির বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বিনিয়োগকারীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মত বাজার বিশ্লেষকদের।
গত সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় রোববারও দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে বিনিয়োগকারীদের কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। ক্রেতা না থাকায় বাজারটিতে ১৬৮টি কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসেই গড়াগড়ি খাচ্ছে। মাত্র ৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২২টির। আর ১৬৮টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৯২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত বছরের শেষ মাসে পুঁজিবাজারে লেনদেনে খরা দেখা দেওয়ার পর নতুন বছরে তা ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাজার সংশ্লিষ্টরা কিন্তু বছরের প্রথম তিন দিন লেনদেন আরও তলানিতে নেমে ২০০ কোটির নিচে চলে যায়।
এরপর পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে গত বুধবার বৈঠক করে বিএসইসি। বৈঠকে ডিএসই ও সিএসই চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কোম্পানি আইসিবি ও সংস্থাটির সব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বিএমবিএ, ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিবিএ, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সব মিলিয়ে আসা দেড়শ জনকে ডেকে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সবাইকে বাজার ভালো করতে নামতে হবে। আর পুঁজিবাজারের স্বাস্থ্য ভালো না হলে ফ্লোর প্রাইস পুরোপুরি উঠবে না।
পরের দিন পুঁজিবাজারে ওই বৈঠকের প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন চার কর্মদিবস পর ও নতুন বছরে প্রথমবারের মতো ৩০০ কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করলে সূচক কমে।
সেখান থেকে রোববার লেনদেন আরও কমল। গতকাল দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৮৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় ৩১৮ কোটি ১ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
গত ২ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয় ১৪৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা; যা ছিল গত ৩০ মাসের মধ্যে ডিএসইর সর্বনিম্ন লেনদেন। ওই সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন দিনই লেনদেন হয়েছে ২০০ কোটি টাকার নিচে। ফলে আগের সপ্তাহের চেয়ে আরও কমেছে সাপ্তাহিক গড় লেনদেনের পরিমাণ। গত সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন হয় ২২৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে ডিএসইতে গড় লেনদেন কমেছে ৪১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বা ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবথেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এডিএন টেলিকমের ১৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বসুন্ধরা পেপার।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আমরা নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, জেনেক্স ইনফোসিস এবং ওরিয়ন ফার্মা।
অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৪৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৯টির এবং ৮১টির দাম অপরিবর্তিত।