এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশে পণ্য রফতানিতে ৮-১৬ হারে শুল্ক প্রদান করতে হবে। বর্তমানের রফতানির বাজার অধিক মাত্রায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকায় নতুন নতুন বাজারে পণ্য রফতানিতে আরও বেশি হারে নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে এলডিসিপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে রফতানি সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠকে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নেতারা এসব কথা বলেন। ডিসিসিআইর নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারের নেতৃত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এসএম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান), সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।
ডিসিসিআই নেতারা বলেন, এমতাবস্থায় আমাদের রফতানির ধারাকে অব্যাহত রাখতে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর, প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও সংস্কার এবং স্থানীয় শিল্প খাতের প্রস্তুতি প্রভৃতি বিষয়ে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ একান্ত অপরিহার্য।
ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার বলেন, ২০২৬ সালের পর বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পণ্য আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক হার হ্রাস করা প্রয়োজন, কারণ প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের এ হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন থাকা প্রয়োজন, যেন সাধারণ মানুষ সহনীয় মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে সক্ষম হয়। তিনি আরও বলেন, পণ্যের মূল্য সহনীয় ও সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রমজান মাসে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের কর সুবিধা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়াতে ডিসিসিআই সভাপতি একটি পৃথক ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ গঠনের প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে এবং ‘আরবিট্রেশন অ্যাক্ট ২০০১’-এর প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব করেন।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী তিন বছর পণ্য রফতানিতে শুল্ক সুবিধা পাওয়া গেলে আমাদের রফতানি সম্প্রসারণে সম্ভাবনাময় দেশ ও আঞ্চলিক ব্লকগুলোর সঙ্গে এফটিএ, পিটিএ ও সেপাসহ অন্যান্য চুক্তি স্বাক্ষরের ওপর আরও বেশি হারে মনোনিবেশ করতে হবে এবং বর্তমান সরকার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করছে। বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ‘ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট মেজার্স (আইএসএমএস)’ বিষয়ক সুবিধা আদায়ের জন্য দক্ষতা বাড়ানোর ওপর তিনি জোরারোপ করেন।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই এবং দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় নীতিমালা সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকার বদ্ধপরিকর।