রাজধানীর কাছেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে চলছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মেলায় বেশকিছু আকর্ষণীয় প্যাভিয়ন আছে। এসবের মধ্যে দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে ‘বঙ্গবন্ধু প্যাভিয়ন’।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এ অভিমত জানা গেছে।
মেলায় মূল ভবনের মাঝের ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। এ প্যাভিলিয়নে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম, রাজনৈতিক ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস বিভিন্ন আলোকচিত্র ও ডকুমেন্টারির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। প্যাভিলিয়নটি দর্শনার্থীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের নানা দিক জানা যায় এ প্যাভিলিয়নে। এছাড়া, বঙ্গবন্ধুর জেলজীবনের নানা আলোকচিত্রও আছে এখানে।
আশুলিয়া থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বাণিজ্য মেলায় আসেন আব্দুল ওয়াহাব শেখ। তিনি বলেন, যার জন্ম না হলে বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো না, সেই মহানায়ক সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্মকে জানাতে পেরে আমার খুবই ভালো লেগেছে। মেলায় প্রবেশের পরপরই বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন দেখতে পেলাম। আমার ছেলে-মেয়েকে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা সময়ের দুর্লভ ছবিগুলো দেখালাম। এই প্যাভিলিয়নটি আমাদের মুগ্ধ করেছে।’
রাজধানীর লালবাগ থেকে মেলায় আসা সালেক আহমেদ বলেন, ‘আজকে আমরা যে স্বাধীনভাবে চলতে পারছি, সেটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে? একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কারণে সম্ভব হয়েছে। উনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে বাংলার মানুষ মুক্তি পেয়েছে, স্বাধীন হয়েছে আমাদের দেশ। তিনি যেভাবে জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তা বড় ইতিহাস। সেই ইতিহাসকে ছোট্ট একটি প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। বাণিজ্যমেলা কর্তৃপক্ষ যেটি করেছে, সেটি ভালো উদ্যোগ। নতুন প্রজন্ম এই প্যাভিলিয়নে ঘুরে আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি, মহানায়কের সম্পর্কে জানতে পারবেন। তবে, এই মহানায়ক সম্পর্কে আরও বেশি করে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হলে আগামীতে এই প্যাভিলিয়নটি আরও তথ্যসমৃদ্ধ করার দাবি জানাই।’
গাজীপুরের কালিগঞ্জ থেকে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে মেলায় আসেন নাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। তিনি দেশের জন্য ও দেশের মানুষের কল্যাণে সারাজীবন কাজ করেছেন বলে বাবা ও দাদার মুখ থেকে শুনেছি। মেলায় ঘুরতে এসে এই মহান নেতার নামে যে প্যাভিলিয়ন দেখতে পেলাম, তাতে খুব ভালো লেগেছে। প্যাভিলিয়নটি আরও বড় হলে ভালো হতো।’
তিনি বলেন, ‘এই প্যাভিলিয়নে জাতির জনকের নানা দুর্লভ ছবি দেখে ভালো লেগেছে। নিজেকে গর্বিত মনে হয়েছে এই ভেবে যে, আমরা বীরের জাতি।’
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে মেলায় এসেছেন সুজন মিয়া। বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নে ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবিগুলো। ছবিগুলো দেখে সন্তানরা সুজন মিয়ার কাছে নানা বিষয়ে জানতে চাচ্ছিলেন।
সুজন মিয়া বলেন, ‘যদি প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা শহরে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ আলোকচিত্র দেখানোর ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে নতুন প্রজন্ম খুব সহজেই এই মহান নেতা সম্পর্কে জানতে পারত। বাণিজ্য মেলা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন করার জন্য।’
বাণিজ্য মেলা ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। তবে, ছুটির দিনে এক ঘণ্টা বেশি খোলা থাকে। অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে নিয়মিত কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি বাস চলছে।
এবারের মেলায় দেশি-বিদেশি মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন আছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, ভারতসহ ১০ দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
মেলার প্রবেশমূল্য বড়দের জন্য জনপ্রতি ৪০ টাকা এবং বাচ্চাদের ২০ টাকা। মেলায় স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ছাড়াও শিশুদের জন্য পার্ক করা হয়েছে। সেখানে রাইড বসানো হয়েছে। মেলার ভেতরে আছে পর্যাপ্ত ফুড কোর্ট।