বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি কোন দিকে
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ
অনলাইন সংস্করণ
বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন সংকটের মুখে রয়েছে। এই তথ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। আর সংকটগুলো হচ্ছে- ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনের কোভিড পলিসি, ইউরোপে জ্বালানি সংকট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। কোভিডের নতুন ঢেউ চীন ছাড়াও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও রাশিয়ার কিছু অংশে। এই সংকট বিবেচনায় এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতি কেমন?
বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাবে মূল্যস্ফীতির চাপের মুখে পড়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাংকে তারল্য পরিস্থিতি ও ডলার সংকট রয়েছে। এ ছাড়াও ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সংশোধন করতে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পরিবর্তন করতে হয়েছে।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কো-অর্ডিনেশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ ও মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করতে হয়েছে। মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণের অনুষঙ্গ হিসেবে মুদ্রানীতি অনেকটা সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার জানুয়ারি-জুন মাসের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এই ঘোষিত মুদ্রানীতিকে অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও, কেউ কেউ মনে করছেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের তেমন কোনো সূচক রাখা হয়নি। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, ডলার সংকট সহজে কাটবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দাবি করেছেন, ডলার সংকট অনেকটা কেটে গেছে। এর যুক্তি হিসেবে তিনি এলসি খোলার সংখ্যা উপস্থাপন করেছেন।
এখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ তাদের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রাক্কলন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি পরিস্থিতি যেখানে ২০২০ সালে ধরা হয়েছিল ৩ দশমিক ১ শতাংশ, ২০২১ সালে ধরা হয়েছিল ৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ধরা হয়েছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৩ সালে এসে তা প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রাক্কলন বেশ সন্তোষজনক। ২০২০ সালে প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২১ সালে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর ২০২২ সালে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। তবে ২০২৩ সালে সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
বৈশ্বিক মূল্য পরিস্থিতি সম্পর্কে ফাওয়ের মূল্যায়ন হচ্ছে, জ্বালানি, জ্বালানি বহির্ভূত, খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত প্রতিটি মূল্য আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কোনো কোনো পণ্য ওঠানামার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
এখন আসা যাক বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি নিয়ে। গত ২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০২১ অর্থবছরে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০২২ অর্থবছরের জুন মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। একই অর্থবছরে নভেম্বরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। তবে সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির হার প্রাক্কলন সংশোধন করে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।
আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে ২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ অর্থবছরে আমদানি আরও বৃদ্ধি পায়। যার মূল্য ৮৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৪১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। তবে চলতি অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
রফতানি ক্ষেত্রে ২০২০ অর্থবছরে রফতানি যেখানে হয়েছে ৩৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। সেখানে ২০২১ অর্থবছরে এসে দাঁড়ায় ৩৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের জন্য ৫২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।
রেমিট্যান্স প্রবাহ গত ২০২০ অর্থবছরের তুলনায় পরবর্তী অর্থবছরের রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ অর্থবছরের যেখানে ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলন করা হয়েছে ২১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ চলতি অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে বেশ কিছুটা সংশোধন করে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাবলিক সেক্টরে ঋণের প্রাক্কলন চলতি অর্থবছরের জন্য ৩৬ শতাংশ করা হলেও, পরে তা বৃদ্ধি করে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ করা হয়েছে। তবে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রাক্কলন তেমন কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। আগে প্রাক্কলনের ১৪ দশমিক ১ শতাংশ সীমাবদ্ধ থাকছে।
মূলধন বাজারকে আরও শক্তিশালী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সূত্রে জানা গেছে। গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত-উল ইসলাম সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।