অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জে দিনে ৭৫০ কোট টাকা লেনদেন
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:১৭ | অনলাইন সংস্করণ
অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ২৩৫টি। তবে এর বাইরে অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে ব্যবসা করছে আরও হাজারের বেশি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। এরও বাইরে আরও কয়েক শ’ প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ফোনে ফোনে ব্যাগ কাঁধে ঘুরে ঘুরে অবৈধভাবে বেচাকেনা করছে দেশি-বিদেশী মুদ্রা। অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে প্রতিদিন ৭৫০ কোটি টাকা সমমূল্যর অর্থ লেনদেন হচ্ছে। আনুমানিক এই হিসেবে সংখ্যাটি মাসে ২২ হাজার ৫০০ কোটিতে দাড়ায়।
বুধবার দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এসব কথা জানান।
এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ টিমের তথ্য ও সহযোগীতায় রাজধানীর গুলশান-১, রিংরোড, মোহাম্মদপুর, উত্তরার আশকোনা, এবি মার্কেট, চায়না মার্কেটে একযোগে পাঁচজন বিশেষ পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকায় অবৈধ। গ্রেফতাররা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব অফিস এবং ভাসমান যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি (লাইসেন্স) ব্যতিত বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করে আসছিল।
এই অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে বলেই ধারনা করা হচ্ছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় পরিচালিত অবৈধভাবে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের নেপথ্যে যারাই থাক তাদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জনায় সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।
মঙ্গলবার রাজধানীর পাঁচটি স্থানে একযোগে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের বিরেুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সিআইডি। তার মধ্যে তিনটি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ অফিস হচ্ছে- গুলশানের জে এম সি এইচ প্রাইভেট লিমিটেড, মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের আলম এন্ড ব্রাদার্স এবং উত্তরার আশকোনা মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের তৈমুর মানি এক্সচেঞ্জ। বাকি দুটি ফেরারি প্রতিষ্ঠান। অভিযানে মোট পাঁচ প্রতিষ্ঠানের ১৪জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় আসামীদের কাছ থেকে ১ কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৬ টাকা সমমূল্যের ১৯টি দেশের বৈদেশিক মুদ্রাসহ সর্বমোট ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৬ টাকা জব্দ করা হয়।
সিআইডি প্রধান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা স্বীকার করেছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বিদেশী মুদ্রা অবৈধভাবে ক্রয়- বিক্রয় করে আসছিল। গড়ে সকল অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জে প্রতিদিন ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। যা মাসে হিসাব করলে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিদেশী মুদ্রা অবৈধভাবে ক্রয়- বিক্রয় করে মানি এক্সচেঞ্জগুলো।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা আমাদের অপরাশেনাল কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো। আমাদের অভিযানের কারণে অনেক অবৈধ প্রতিষ্ঠান অফিস গুটিয়ে কাঁধে-ঘারে ব্যাগ নিয়ে ঘুরে ঘুরে ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে ব্যবসা করছে। যার যেখানে পরিমাণ বিদেশী মুদ্রা দরকার সেখানে পৌছে দিচ্ছে। বিনিময়ে ডলার বা অন্য বিদেশী মুদ্রার ন্যায্যমূল্যের তুলনায় বেশি টাকা নিচ্ছে।
সিআইডি প্রধান সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যখন কোনো কাজে বা চিকিৎসা বিদেশে যাচ্ছেন তার আগে কিছু প্রসিডিউর আছে। ভিসা পাবার পর তিনি বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকে ভিসা দেখালে বিদেশী মুদ্রা পাবেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তা দিতে বাধ্য। তাহলে কেন তারা অবৈধভাবে ১০০ টাকার ডলার ১১৫ বা ১২০ টাকায় ক্রয় করবেন! এটা অন্যায় ও অবৈধ। আমরা এই অবৈধ কাজকে উৎসাহিত করতে পারি না। লাগবেই যখন তখন বৈধভাবে নিবো, ব্যাংক কিংবা বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান থেকে নিবো। তাহলে ফুলেফেপে উঠা এসা অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যাবে।
এক প্রশ্নের জব্বাবে সিআইডি প্রধান বলেন, যারা প্রবাসী তারা দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাসায় বসেই টাকা পাঠায়। এক্ষেত্রে সময় বাঁচে ও কোন হ্যারাসমেন্ট বা বাড়তি কোন ভাড়া লাগে না। দেশের মানুষ ঘরে বসে টাকা পেয়ে যায়। তবে এটা অবৈধ। আমাদের দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার মতে, কোন অবৈধ পথ বেছে নেওয়া উচিত নয়। ব্যাংক থেকে সহজে মানি এক্সচেঞ্জ করা যায়, সেই বিষয়গুলো বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে। তবে যে কোনো ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা যদি হুন্ডি কিংবা অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে জড়ানোর তথ্য মেলে তবে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।