তৈরি পোশাক, নিট ও বস্ত্র মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ সংবাদ সম্মেলনে পোশাক শিল্পের জন্য ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট হতাশাব্যঞ্জক বলে জানিয়েছেন।
শনিবার (৮ জুন) ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা এমন মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমাদের প্রত্যাশা ছিলো বাজেটে পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক কিছু নীতি সহায়তা থাকবে। বিশেষ করে উৎসে কর ০.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং এটিকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে আমাদের গভীর প্রত্যাশা ছিলো এবং আছে। পাশাপাশি আরও প্রত্যাশা ছিলো - বাজেটে ইনসেনটিভের ওপর আয়কর অব্যাহতি, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, এইচএস কোড ও ওজন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, ইআরকিউয়ের ওপর আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানির ওপর কর রেয়াত, পোশাক শিল্পের ঝুটের ওপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট ও রিসাইকেল ফাইবার সরবরাহের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার ইত্যাদির ঘোষণা আসবে, যা বাজেটে উঠে আসেনি। এটা আমাদের জন্য হতাশাব্যাঞ্জক।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, কঠিন বাস্তবতায় নানামুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সংকোচনমূলক বাজেট প্রস্তাবনা করা হয়েছে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৭৫ শতাংশ ধরা হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে ধরে রাখার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। বাজেটে শিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এগুলো বাজেটের ইতিবাচক দিক।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা জানান, যদিও বক্তব্যে একাধিকবার মূল্যস্ফীতিকে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের এই প্রধান খাতটির জন্য কিছু নীতি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের মূল প্রস্তাবগুলো প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। তবে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক প্রস্তাবনাগুলোকে আমরা সাধুবাদ জানাই, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – ভ্যাট আপিলের ক্ষেত্রে দাবিকৃত অর্থের ২০ শতাংশ জমা দিতে হতো। সেটা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ১৭টি বিভিন্ন টেক্সটাইল পণ্য রেয়াতি হারে আমদানির সুবিধা দেয়া হয়েছে। শিল্প কারখানায় ৫০ টন বা অধিক ক্ষমতার চিলার আমদানির ক্ষেত্রে সর্বমোট কর ১০৪.৬৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। পূর্বে এটি এক শতাংশ রেয়াতি হারে আমদানির বিধান ছিল। আমরা পুনরায় এটি এক শতাংশ রেয়াতি হারে আমদানির অনুমোদন দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
পোষাক শিল্পকে সহায়তার কথা জানিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আপনারা জানেন যে কোভিড মহামারি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভূ-রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট বিশ্বমন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং তা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশে সুদের হার বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে এসেছে। একই সঙ্গে পণ্যের দরপতন হয়েছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় পাঁচ বছরে দফায় দফায় প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিল্প একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে আমাদের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে। শুধু মে মাসেই কমেছে ১৭ শতাংশ। আমরা মজুরি ৫৬ শতাংশ বাড়িয়েছি, কিন্তু আমাদের মূল্য বাড়েনি। বরং গত ৯ মাসে আমাদের প্রধান পণ্যগুলোর দরপতন হয়েছে ৮ থেকে ১৮ শতাংশ। শিল্প যখন এরকম একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে, তখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো সিংহভাগ রপ্তানি আয় অর্জনকারী পোশাক শিল্পকে সহায়তা দেয়া এবং এর মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।