ছয় ব্যাংককে দেয়া হল ২২,৫০০ কোটি
‘আমানতকারীর নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের’
রোববার থেকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাবেন গ্রাহকরা
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ | অনলাইন সংস্করণ
অযথা টাকা না তুলে ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখার পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, প্রতিটি ব্যাংকের আমানতকারীর নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। যে ব্যাংকেই টাকা থাকুক তা নিরাপদে আছে। আগের মতো এখন আর লাখ–লাখ টাকা চুরি হচ্ছে না।
তারল্য সঙ্কটে থাকা ৬ ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ টাকা বিশেষ ধার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আরও টাকার প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই সহায়তা দেবে। এর ফলে আগামী রোববার থেকে ব্যাংকগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাবেন গ্রাহকরা। তবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অর্থ না তোলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিশেষ তারল্য সহায়তা পাওয়া ব্যাংকগুলো হল– ন্যাশনাল, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, এক্সিম, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও প্রতিনিধিদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, ছয় ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সহায়তা দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনে আরও দেয়া হবে। আগামী রোববার থেকে কোনো গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা না পেয়ে ফেরত যাবেন না। গ্রাহকদের অনুরোধ, যেটুকু প্রয়োজন সে পরিমাণে টাকা তুলুন।
সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম টাকা ছাপাব না। কিন্তু সেটা থেকে সাময়িকভাবে সরে এসেছি। বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সেই টাকা আবার তুলে নিয়ে আসব। কিন্তু মনিটরি পলিসি আগের মতো টাইট থাকছে। এখানে নেট মানি ক্রিয়েশন হচ্ছে না। একদিকে সহায়তা করা হচ্ছে, অন্যদিকে বন্ডের মাধ্যমে তুলে নিচ্ছি। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী এই সহায়তা দেওয়া হবে। আমাকে ডিপোজিটর ও মূল্যস্ফীতি দুটিই রক্ষা করতে হবে। টাকা ছাপাব না বলেছিলাম। কিন্তু মানুষের অবস্থার কি পরিবর্তন হয় না?
আগের সরকারও টাকা ছাপিয়ে সহায়তা করেছিল, আবার এখনও দেয়া হচ্ছে- এখন তাহলে তফাৎ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে গর্ভনর বলেন, ব্যাংক থেকে এখন আর টাকা চুরি হচ্ছে না। আগে টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেওয়ার পর টাকা বাইরে চলে গেছে। কিন্তু এখন জবাবদিহি নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এস আলমের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, উনি কী বলেছেন তা নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। কিন্তু সব অপরাধীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা আইন অনুযায়ী তাদের অ্যাসেট বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেব। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটা করা হচ্ছে।
ডিজিদের পদত্যাগ চেয়েছেন কেউ কেউ, এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাকে কেউ চাপ দিলে চাকরি ছেড়ে চলে যাব। আমি কোনোকিছু বরদাশত করব না।
বিগত দিনে যারা অনিয়মে যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, সামনের দিকে তাকাতে হবে। আমাদের পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে আমি নিজ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেব না। এখানে দলাদলি আছে। লাল, নীল দলের প্রতিনিধিত্ব না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হয়ে কাজ করেন।
বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি নিয়ে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর কোনো ইচ্ছে আমার নেই। হয়তো ভবিষ্যতে খেলাপি ঋণ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। কিন্তু কোনো তথ্য গোপন করা হবে না। এখনও সব চিত্র সামনে আসেনি। তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আবার কাজ করছি।
গভর্নর আরও বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেয়া হলে ব্যাংকে শৃঙ্খলা আসবে না। অনেক আইন ছিল, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো আরও শক্তিশালী করার কাজ চলছে। আশা করি কাজ হবে।’