মজুদদারদের বিরুদ্ধে খাদ্যমন্ত্রীর ব্যবস্থা নেওয়া এবং আমদানির হুঁশিয়ারির পরও কমছে না চালের দাম। তবে চাল আমদানি করা হলে দাম কমতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরাও। দাম না কমলে সরকারও চাল আমদানির পথে হাঁটতে পারে বলে জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আমন মৌসুমের শুরুতে চালের দাম এক দফা বাড়ে। দিন দশেক আগে বাড়ে আরেক দফা। এ সময় কেজিপ্রতি দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার চালের বাজার ও মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক হয়। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে ধান-চালের অবৈধ মজুদের তথ্য দিতে বলেন। এ সময় মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান এবং চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে না এলে আমদানির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, এবার ২৫ শতাংশের কম শুল্কে চাল আমদানি করতে হবে। অনুমতিটা আগেই নিয়ে নিতে হবে।
তবে মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি কাজে আসেনি। কমেনি চালের দাম। মন্ত্রীর এমন কথায় চালের বাজার নামবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
চালের পাইকারি বাজার বাবুবাজারে ১০ দিন আগে মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি দু-তিন টাকা বেড়ে ৫৭-৫৯ টাকায় ওঠে। এখনো সেই দামেই আছে। পাইকারিতে যে নাজিরশাইলের দাম প্রতি কেজি ৬২ টাকা ছিল, তা ৬৮ টাকায় ওঠে। ৪০ টাকার মোটা চাল পাইকারিতে ৪২ টাকা, ৫০ টাকার আঠাশ চাল বেড়ে হয় ৫২-৫৪ টাকা।
গতকাল খিলগাঁও, মালিবাগ ও মুগদার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আড়তে সিরাজ, এরফান, দাদা, মজুমদারসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় এসব চালের দাম ৬৩ থেকে ৬৪ টাকা। আড়তে নাজিরশাইল ৬৩ থেকে ৬৮ টাকা এবং খুচরায় ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আড়তে আঠাশ, পাইজামের দাম ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা এবং খুচরায় ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। বাজারের মেসার্স মাসুদ ট্রেডার্সের মালিক মাহবুব রহমান বলেন, চালের দাম সর্বশেষ বৃদ্ধির পর আর কমেনি। আমদানি করা হলে কমতে পারে বলে মনে হচ্ছে।
মালিবাগ বাজারের মিতালী রাইস এজেন্সির মালিক মো. সবুজ বলেন, মন্ত্রীর বক্তব্যে চালের দাম নামবে না। দাম কমাতে পর্যাপ্ত সরবরাহ লাগবে।
সেগুনবাগিচা বাজারে মিনিকেট চাল ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা, নাজিরশাইল ৬৪ থেকে ৬৮ টাকা, আঠাশ ৫২ টাকা এবং পাইজাম ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) চলতি মাসের ‘খাদ্যশস্য : বিশ্ববাজার ও বাণিজ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করেছে, যা চাল আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে। ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারিভাবে আমদানি করা হয়েছে ৮.৬২ লাখ টন। বেসরকারি পর্যায়ে এখন আমদানি বন্ধ।
সরকার ৭ নভেম্বর থেকে আমন ধান সংগ্রহ করছে, চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এর মধ্যে তিন লাখ মেট্রিক টন আমন ধান এবং পাঁচ লাখ টন সিদ্ধ আমন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। গত ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭ হাজার ৬৮১ টন আমন ধান এবং দুই লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৫ টন সিদ্ধ আমন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এই সংগ্রহের পর সরকারি গুদামে মোট চালের মজুদ দাঁড়িয়েছে ১৩.৭০ লাখ টন। এ ছাড়া ৩.৩৩ লাখ টন গম, ০.১৮ লাখ টন ধানসহ মোট খাদ্যশস্যের সরকারি মজুদ দাঁড়াল ১৮.১৪ লাখ টন।
গত বছর চালের বাজার অস্থির হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গবেষণা করা হয়। এতে বলা হয়, বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে সব সময় কমপক্ষে সাড়ে ১২ লাখ টন চালের মজুদ এবং ২৫ লাখ টন চালের সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে।