২০১৯ সাল, নিজের অদম্য মেধার প্রমাণ দিয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় নেত্রকোনার স্বপ্নবাজ বাপ্পী। ভর্তি হন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পছন্দের বিষয় মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে।
তবে পড়াশোনার থেকে উদ্যোক্তা বা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নটাই বড় করে দেখতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন থেকেই। ভর্তির কিছুদিন পরেই শুরু হলো বৈশ্বিক মহামারি করোনা। পুরো বিশ্ব তখন স্থবির। বাপ্পী চিন্তায় পড়ে গেলেন। ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি স্বপ্নের পিছে দৌঁড়াবেন। সেটা আর হয়ে উঠলো না। ঘরে বন্দি হয়ে গেলেন। আশেপাশে অনেকের কাছে পরামর্শ নেওয়া শুরু করলেন। কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায়? স্বাবলম্বী হওয়া যায়? পাশে থাকার থেকে পেছন থেকে টেনে ধরার মানুষ ছিল বেশি। তবুও বাপ্পী হার মানলেন না। পরামর্শ নিতেই থাকলেন। পাশে পেলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভাইকে। তার পরামর্শে শূন্য টাকা দিয়ে শুরু অনলাইনে পোশাকের ব্যবসা।
শূন্য টাকা দিয়ে কিভাবে ব্যবসা শুরু করলেন সেই গল্প শুনতে চাইলে বাপ্পী বলেন, প্রথমে কিছু দিন প্রি-অর্ডার নেওয়ার পর সেই টাকা দিয়েই ব্যবসা শুরু করছি। গ্রাহক যারা ছিল তাদের প্রোডাক্ট তাদের বুঝিয়ে দিয়ে কিছু লাভের টাকা আমার ছিল সেই টাকা দিয়ে আবার নতুন করে মালের অর্ডার করে আবার প্রি-অর্ডার নেওয়া শুরু করি। এভাবে ক্রমে ক্রমে ব্যবসাকে বড় করে বর্তমানে বাপ্পীর ব্যবসার মূলধন ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায়। এঙকর ক্লথিং (Anchor Clothing) নামে বাপ্পির ব্র্যান্ডে পাওয়া যায় জার্সি, টি-শার্ট, পলো-শার্ট, হুডি, টাউজার, ট্রাক স্যুট প্রভৃতি। নিজ জেলা ও ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও এখন অর্ডার আসে। ডেলিভারি সময় মতো দেওয়ার জন্য মাসিক ৯ হাজার টাকা সম্মানি দিয়ে কাজ করান আরও দু'জনকে। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অসংখ্য শিক্ষার্থী। স্বপ্নবাজ বাপ্পি এখন সকলের অনুপ্রেরণা।
বাপ্পীর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একবার অগ্রীম কিছু কাপড় কিনে লোকসান হয়েছিল। তখন বাবা-মা মানসিক এবং আর্থিকভাবে পাশে ছিল। বাবা-মা ও বন্ধুদের সাহায্য সহযোগিতা পাই সব সময়। সবার সহযোগিতায় নিজের স্বপ্নকে অনেক বড় পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। আমি বাংলাদেশের পোশাক খাতে নতুনত্ব চাই। দেশে এবং দেশের বাইরে আমার নিজস্ব ভবনে আমার ব্র্যান্ডের আমার ডিজাইনের তৈরি পোশাক থাকবে, সেই স্বপ্নই দেখি আমি।