ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রায় ৬ মাস পর জাবিতে প্রথম বর্ষের ক্লাশ শুরু

প্রায় ৬ মাস পর জাবিতে প্রথম বর্ষের ক্লাশ শুরু

ভর্তি পরীক্ষার দীর্ঘ ৬ মাস পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (৫১ ব্যাচ) স্নাতক সম্মান শ্রেণীর ক্লাস শুরু হয়েছে। গণরুম বিলুপ্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েক দফায় ক্লাশ পেছালেও সেই গণরুমেই ঠাই মিলেছে নবীন শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ।

মঙ্গলবার ৩১ (জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন। তার আগে গত সোমবার রাতেই বিভিন্ন হলের গণরুমে স্থান হয় নবীন শিক্ষার্থীদের। ব্যাচটির ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছিলো গতবছরের ৯ই আগস্ট।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নবনির্মিত আবাসিক হলগুলো চালু করা সাপেক্ষে পুরাতন হলগুলোতে গণরুম না রাখার ঘোষণা দেয় কতৃপক্ষ। তবে নানা জটিলতায় নতুন হলগুলো উদ্বোধন করতে পারেনি প্রশাসন। ফলে কয়েক দফায় প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর সময়সূচি পিছিয়ে আজ মঙ্গলবার ক্লাস থেকে শুরু হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য একটি করে হল চালু করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে সিট দেওয়া হয়নি ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। ফলে পুরাতন হলের গণরুমেই থাকতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নবীন শিক্ষার্থীরা হলের কমন রুম, ডাইনিং রুম, রিডিং রুম, সংসদ রুম, নামাজের কক্ষ ও সাইবার রুম প্রভৃতি স্থানে গাদাগাদি করে থাকছেন। সেখানে একজনের জায়গায় কম করে হলেও তিন থেকে চারজন শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা গণরুম ছেড়ে ‘মিনি গণরুমে’ উঠেছেন। সেখানে তারা দু’জনের রুমে ছয় থেকে আটজন এবং চার জনের রুমে ১৪ থেকে ১৬ জন থাকছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলগুলোতে বৈধ শিক্ষার্থী ৪৬ ব্যাচ থেকে শুরু হলেও ৪৩ ও ৪৪ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা এখনো হলে অবস্থান করছেন। আবার ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন ৪২ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরাও হলে থাকছেন। অন্যদিকে নবনির্মিত দু’টি হল চালু করা হলেও সেখানে নবীন শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সেখানে আবেদনের ভিত্তিতে পুরাতন হলের শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পুরাতন হলের ফাঁকা আসনগুলো ‘মিনি গণরুমে’ থাকা তৃতীয় বর্ষের (৪৯তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা দখল করছেন। ফলে গণরুমে থাকা দ্বিতীয় বর্ষের(৫০তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা উঠছেন ‘মিনি গণরুমে’। সবমিলে অছাত্ররা হলে অবস্থান করায় এবং অব্যবস্থাপনায় নবীন শিক্ষার্থীদের গণরুমে থাকতে হচ্ছে।

লোক প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র হাসান তারিক বলেন, 'দীর্ঘ অপেক্ষার পর আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে। ক্লাসরুমেঅনেক নতুন মুখ ও নতুন চিন্তার মুখোমুখি হয়েছি। সত্যিই অনেক আনন্দের অনুভূতি ছিলো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে 'গণরুম' নামক বসবাসের অযোগ্য আবাসন ব্যবস্থা দেখে মন খারাপ লাগছে। উপাচার্য স্যারের প্রতিশ্রুতি শুনে আশা করেছিলাম নতুন হলে সিট পাবো। কিন্তু এখানকার বাস্তবতা ভিন্ন। এরপরেও আশা করছি পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন সুন্দর হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সেশনের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বন্ধুদের প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই ক্লাস শুরুর আগেই আমরা সেশনজটে পড়েছি। শিক্ষকদের প্রতি প্রত্যাশা থাকবে আমরা যেনো আর পিছিয়ে না পড়ি।'

পঞ্চগড় থেকে আগত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সোবহান মিঞা বলেন, 'অনেকবড় স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আনছি। কিন্তু এখানে এসে আবাসন ও খাবার ব্যবস্থা দেখে হতাশ হয়েছি। গত ৬ মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জেনেছি জাহাঙ্গীরনগরে আর ‘গণরুম’ থাকবে না। কিন্তু এখানে দেখছি ভিন্ন চিত্র। যাই হোক ছেলের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিরাপদে সম্পন্ন হোক সে প্রত্যাশা করি দায়িত্বশীলদের কাছে।'

বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলগুলোতে প্রশাসনের ‘বিন্দুমাত্র কর্তৃত্ব’ নেই বললেই চলে। যেটুকু রয়েছে তা হল স্বাক্ষরদান ও হল অফিস পরিদর্শন। এছাড়া আসন বরাদ্দও শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা সংক্রান্ত কোনো কাজে শিক্ষকরা তদারকি করেন না। কিন্তু হলের মধ্যে বড় কোনো ঝামেলা হলেই কেবল দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দেখা মেলে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও হল প্রশাসনের পর্যাপ্ত কর্তৃত্ব রয়েছে। তাই হলগুলোতে আসন বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়াদি হল প্রশাসনই তদারকি করে। ফলে সেখানে আসন সংকট থাকলেও সঠিক ব্যবস্থাপনা রয়েছে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি ও অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, 'নতুন হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উঠানো হয়নি। তবে শীগ্রই নবনির্মিত অন্য চারটি হল চালু করে আবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের উঠানো হবে। সেখানে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া হল থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার জন্য সবগুলো হলের প্রাধ্যক্ষদের নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বের করতে পারলে এবং নতুন হলগুলো চালু হলে গণরুম সংকট নিরসন হবে।'

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, আমরা দ্রুত পরীক্ষার মাধ্যমে সেশন জট কমানোর পরিকল্পনা করেছি। সেই মোতাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বছরের নভেম্বরে প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ফেব্রুয়ারিতে নতুন হল চালু হবে। যেখানে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এলোটমেন্ট দেওয়া হবে কিংবা পুরাতন হলের শিক্ষার্থীদের নতুন হলে শিফট করে গণরুম সংকট দূর করা হবে। আশা করছি আগামী এক মাসেই বিশ্ববিদ্যালয় তার পূর্বের শতভাগ আবাসিক রূপ ফিরে পাবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,ক্লাস শুরু,শিক্ষার্থী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত