ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাবিং এর উপযুক্ত সময় ও গুরুত্ব

বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাবিং এর উপযুক্ত সময় ও গুরুত্ব

প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। অনেকে নিশ্চয়ই যুক্ত আছেন এমন বিভিন্ন দলের সঙ্গে। আবার অনেক শিক্ষার্থীই মনে করেন, ক্লাব বা সংগঠনে কাজ করা মানে সময় নষ্ট, পড়ালেখার ক্ষতি। সত্যিই কি তাই?

ক্লাবিং কি? ক্লাবিং এর উপযুক্ত সময় কোনটি? কি ধরণের কাজ হয় ক্লাবগুলোতে? তার জন্য কোন ধরণের ক্লাবিং উপযুক্ত? কেন সে ক্লাবিং করবে? আদৌ ক্লাবিং করার উপকারিতা আছে কি না? এসব নিয়ে লিখেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী, নির্ভয় ফাউন্ডেশন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক রবিউল ইসলাম ও বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন।

ক্লাব ইংরেজি শব্দ; যার অর্থ সংঘবদ্ধ হওয়া। কতিপয় ব্যক্তি বা দল যখন পারস্পরিক স্বার্থে একত্রিত হয়ে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত হয়ে সামাজিক পদ্ধতি ও সুনির্দিষ্ট কাঠামোর ভিতর অন্তর্ভুক্ত হয় তখন তাকে ক্লাব বলে। আর ক্লাব করাকে ক্লাবিং বলে।

সদ্য কলেজের গন্ডি পার হয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনগুলো স্বপ্নের মত হয়ে ধরা দেয়। নতুন পরিবেশে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয়। ক্যাম্পাসে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করে। ক্রিয়াশীল সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সংগঠনগুলোতে নতুন সদস্য নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক সংগঠন থাকে। ক্লাবিং করার ইচ্ছা কমবেশি প্রতিটি নবীন শিক্ষার্থীর মাঝেই থাকে। শেখার আগ্রহ নিয়ে যোগ দেয় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, দক্ষতা উন্নয়নমূলক ক্লাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষে ক্লাবিং না করে চতুর্থ বর্ষে এসে ক্লাবিং এর সাথে সম্পৃক্ত হয়। তবে ক্লাবিং করে নিজের দক্ষতা উন্নয়নের উপযুক্ত সময় প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ। আর তৃতীয় বর্ষ নেতৃত্ব অনুশীলনের সময়।

ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর সাথে যারা অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে তারা আর্থিকভাবে কোনো লাভবান হচ্ছে না ঠিকই। তবুও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝুঁকে পড়ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতি। অনেকে স্কুল লাইফ থেকেও ক্লাবিং করে থাকে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝুঁকে পরার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।

দক্ষতা বিকাশ ও নেতৃত্ব চর্চা, সৎকর্ম প্রচার অথবা মানুষের জীবনমান উন্নত করার উদ্দেশ্যে নিয়ে স্বার্থহীনভাবে শিক্ষার্থীরা সংগঠনগুলোতে কাজ করে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত সাংবাদিকতা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক,সাহিত্যিক, পরিবেশবাদি, ভাষা চর্চা, খেলাধূলা,বিতর্ক,ধর্মীয় ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক বিভিন্ন ক্লাব থাকে।

প্রতিটি ক্লাব বা সংগঠনের কাজের ভিন্নতা থাকলেও মৌলিক বিষয় একই। যেমন সবার মতকে শ্রদ্ধা করা, সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা, দক্ষতা বৃদ্ধি করা,নেতৃত্ব চর্চা করা। তবে নবীন শিক্ষার্থীরা যে ভুলটা করে তা হলো একই কাজ করে এমন একাধিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে যে মানসিক প্রশান্তির ইচ্ছাশক্তি নিয়ে সেচ্ছাসেবী কাজ শুরু করে তা পূরণ ব্যর্থ হয়। এমনকি বিরক্ত হয়ে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়। আবার একাধিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার কারণে কোন সংগঠনের সাথে পূর্ণ সময় দেওয়া হয়না। ফলে সঠিকভাবে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারে না। আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই ক্লাবিং করার ক্ষেত্রে প্রথম যে ভুল তা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। নিজের আগ্রহ ও উৎসাহকে প্রাধান্য দিয়ে বিভাগ সম্পর্কিত ক্লাবিং করার পাশাপাশি দক্ষতা সম্পর্কিত একটি বা দুইটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন, একটি ল্যাঙ্গুয়েজ, দক্ষতা উন্নয়ন বা সাংস্কৃতিক সম্পর্কিত সংগঠনে যুক্ত হওয়া উচিত।

ক্লাবিং করলে নিজেকে সবসময় প্রতিযোগিতার মধ্যে রাখা যায়। ব্যক্তি যোগাযোগ, সামাজিকীকরণ, সহনশীলতা ও পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ বৃদ্ধি পায়।

সন্তোষজনক একাডেমিক ফলের সঙ্গে এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ হচ্ছে সফল যুগলবন্দি। এই দুটির মিশ্রণেই সফল একটা ক্যারিয়ার গঠন সম্ভব। উচ্চশিক্ষায় সংগঠন বা সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পান। চাকরিক্ষেত্রের বাস্তব অবস্থা বা কেস স্টাডিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজকেই বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে কর্পোরেট হাউসগুলো।

যাঁরা স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ক্লাবিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাঁরা নিয়মানুবর্তিতার ব্যাপারে আগে থেকেই সচেতন ও অভ্যস্ত থাকেন, তুলনামূলক কর্মঠ হন, টানা সময় নিয়ে কাজ করার মানসিকতা রাখেন এবং সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন এসব কারণে কর্মজীবনে নতুন করে নিয়ম মানার ক্ষেত্রে বেগ পেতে হয় না। এছাড়া দলবদ্ধভাবে কাজ করার দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রে টিম ওয়ার্ক বড় ভূমিকা রাখে। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেন, তাঁরা সহজেই যেকোনো টিমের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন, যা বিশ্বের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আর নিষ্ঠা ও কর্মস্পৃহা গড়ে ওঠার হাতিয়ার হলো ক্লাবিং।

ক্লাবিং এ যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীরা সাধারণত ‘মাল্টিটাস্কিং’ বা একসঙ্গে একাধিক কাজ চালিয়ে নেওয়ায় পারদর্শী হন। কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারখানায় যেকোনো মুহূর্তে একজনের ওপর একাধিক কাজের দায়িত্ব অর্পণ করার প্রয়োজন হতে পারে। সেই সময়ে ক্লাবিং এ যুক্ত থাকা গ্র্যাজুয়েট সবার থেকে এগিয়ে থাকেন।

ক্লাব,সংগঠন,কাজ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত