ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ছাত্রলীগ ইস্যুতে উত্তপ্ত বাকৃবিতে অচলাবস্থা

আন্দোলনে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি
ছাত্রলীগ ইস্যুতে উত্তপ্ত বাকৃবিতে অচলাবস্থা

ছাত্রলীগের নানা অপকর্ম ও অফিসার্স পরিষদের অবৈধ কর্মকান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মদদ দেওয়ার অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। এনিয়ে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং চারটি কর্মচারী সংগঠন।

এতে প্রশাসনিক’সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকান্ডে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

রবিবার (৯ এপ্রিল) দিনভর এসব ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) কক্ষে অবস্থান নিয়ে অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করেছে কর্মচারি পরিষদের নেতাকর্মী এবং তিন নারী শিক্ষক।

একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি পালন করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে চারটি কর্মচারী সংগঠন। এই সংগঠনগুলো হল- তৃতীয় শ্রেনী কর্মচারী পরিষদ, চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতি, কারিগরি কর্মচারি পরিষদ এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড।

কারিগরি কর্মচারি পরিষদের সাধারন সম্পাদক মো: ফারুকুল ইসলাম জানান, গত পহেলা এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা রক্ষি আব্দুল্লাহকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মেহেদির অনুসারি আকাশ ও তার সঙ্গীরা। এ ঘটনার বিচার দাবিতে টানা কর্মবিরতি ঘোষনা দিয়ে আন্দোলনে নামে চারটি কর্মচারি সংগঠন।

এ নিয়ে গত ৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিষয়টি সুরাহা করার জন্য চারটি কর্মচারী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনায় বসেছিল। সেখানে অফির্সাস পরিষেদের অবৈধ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কূটক্তি করায় মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় গত রাতে (৮ এপ্রিল) দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় বসে কর্মচারিকে মারধরের ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা, আহত কর্মচারিকে আর্থিক সহযোগীতা প্রদান এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধের শাস্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে এই আশ্বাস বাস্তবায়ন না হলে কর্মচারী সংগঠনগুলো কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স পরিষদের মেয়াদ উর্ত্তীণ কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে অবৈধ মদদ দেওয়ার অভিযোগে দিনভর ভিসি কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা। এতে দিনভর প্রশাসনিক কর্মকান্ডে অচলাবস্থা ছিল লক্ষ্যনীয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিষ্ট্রার মো: মামনুর রশিদ জানান, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অফিসার্স পরিষদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ি যথা সময়ে নির্বাচন দেওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান কমিটির অবৈধ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচন কমিশন গঠন না করে সংগঠনে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে। এতে মদদ দিচ্ছেন ভিসি।

অফিসার্স পরিষদের সাবেক সভাপতি আরিফ জাহাঙ্গীর জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২ জন কর্মচারির বেতন থেকে জনপ্রতি ১৮ শত টাকা করে কেটে নেওয়া হয়েছে। অথচ লিখিত ভাবে বেতন থেকে কোন ধরনের টাকা না কাটতে ভিসি বরাবরে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা টাকা ফেরত চেয়ে এবং অফিসার্স পরিষদের অবৈধ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে আমারা ভিসি কক্ষে অবস্থান নিয়েছি। দাবি পূরন না হলে আমরাদের আন্দোলন চলবে।

অপরদিকে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ভেটেরিনারি অনুষদের এক নারী শিক্ষিকার কক্ষে ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াদের নেতৃত্বে হামলা ও ভাংচুর করে এক পরীক্ষার্থীকের মারধর এবং তিন নারী শিক্ষিকা লাঞ্চিত করার ঘটনার বিচার চেয়ে ভিসি কক্ষে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে লাঞ্চিত শিক্ষক প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাম, প্রফেসর ড. আফরিনা মোস্তারিন ও পপি খাতুন।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্যাতিত শিক্ষিকা প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের হামলা ও লাঞ্চিতের ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো দায়িদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। উল্টো তারা অভিযোগের মূলবিষয় পাশ কাটিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নামে অভিযুক্তদের মদদ দিচ্ছে। এই অবস্থায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।

এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বক্ষেত্রে বিচারহীনতার সংস্কৃতি সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচাররিরা।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান তাঁর কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান বলেন, কর্মচারিকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করছি দ্রুত এবিষয়টি সামাধান হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে অফিসার্স পরিষদের কাউকে একক ভাবে মদদ দেওয়ার কিছু নেই দাবি করে তিনি বলেন, সংগঠন গঠনতন্ত্র মেনে চলবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। এ সময় তিন নারী শিক্ষিকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আজকেই তাদের ডেকে তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে কথা বলে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তবে এই তদন্তে ঘটনার বিষয়বস্তু পরিবর্তন করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কূটকৌশল করা হচ্ছে বলে খোদ ভিসির সামনেই অভিযোগ করেন নির্যাতিত শিক্ষিকা প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাম।

এদিকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নির্যাতিত শিক্ষক ও কর্মচারিরা ভিসি অফিসে অবস্থান কর্মসূচিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে।

বাকৃবি,ছাত্রলীগ,আন্দোলন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত