পাঁচ মাসে নেই সিন্ডিকেট সভা, আটকে আছে শিক্ষক পদোন্নতিসহ নানা সিদ্ধান্তের অনুমোদন 

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ১৬:০০ | অনলাইন সংস্করণ

  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) সিন্ডিকেট সভা হচ্ছে না পাঁচ মাস ধরে। এর ফলে শিক্ষক পদোন্নতি, নিয়োগসহ আটকে আছে নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের অনুমোদন। চলতি বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের ৩১তারিখ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে চলতি মাস পর্যন্ত কোন সিন্ডিকেট সভা করতে পারেনি প্রশাসন। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়- ২০০৫ এর আইনের ১৮(২) ধারায় বলা আছে, ‘প্রতি দুই মাসে সিন্ডিকেটের কমপক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে।‘ অর্থাৎ এ আইন ভঙ্গ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন। 

একটি সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি প্রণয়ন, বার্ষিক প্রতিবেদন, শিক্ষক পদোন্নতি, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ, অর্থ সংক্রান্ত বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত নানা সম্প্রসারণ, একাডেমিক কাউন্সিলের কোন সিদ্ধান্তের অনুমোদন, বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের অনুমোদন হয়ে থাকে। তবে আইন অনুযায়ী সময়মত সিন্ডিকেট সভা আহ্বান না করলে এসব বিষয়ে জট লেগে যায়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

জানা যায়, জবিতে ২০২২সালে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চারটি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু  চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর গেলো পাঁচ মাসে আর কোন সভা না হওয়ায় বেশ কয়েকজন শিক্ষকের বিভাগীয় পদোন্নতি আটকে রয়েছে। যেমন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতিয়ার রহমানের পদোন্নতি বোর্ড অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের মার্চে।

বোর্ডে এ শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা চূড়ান্ত হবে পরবর্তী সিন্ডিকেটে। কিন্তু গত তিন মাসেও সিন্ডিকেট সভা আর অনুষ্ঠিত হয় নি। আর এর ফলে চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে পদোন্নতি না পেলে এ শিক্ষক ইনক্রিমেন্টের আওতায় আসবে না। তাছাড়া বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফজলে এলাহি চৌধুরীর অধ্যাপক পদে, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিভাস কুমার সরকার ও সানজিদা রহমান মল্লিকার সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি আঁটকে আছে। 

পদোন্নতি আটকে থাকার বিষয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিভাস কুমার সরকার বলেন, পদোন্নতি সিন্ডিকেট যখন হবে হয়ে যাবে সমস্যা নেই। উপাচার্য দেশে আসলেই ছুটির পর সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করবেন।

তাছাড়া আটকে আছে শিক্ষক নিয়োগও। (৩১ মে) সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। সিন্ডিকেট সভার কারণে আটকে আছে এ বিভাগের চূড়ান্ত শিক্ষক নিয়োগ।

এদিকে সময়মত সিন্ডিকেট সভা না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির নেতারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, নিয়মিত সিন্ডিকেট সভা না হলে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন, বিভিন্ন রেজাল্ট প্রকাশ, পদোন্নতিসহ সব ধরণের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্হবির হয়ে পড়ে।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. একেএম লুৎফর রহমান বলেন, সিন্ডিকেট সভা সময়মতো না হওয়াতে আমাদের অনেক শিক্ষকের পদোন্নতি আটকে আছে। প্রশাসনকে আমরা বলেছি বারবার দ্রুত সভা আহ্বান করতে। প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা, ছুটি এসব কারণে সভা ডাকা যাচ্ছে না।

সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো: নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, আসলে এটা দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজগুলো ঠিকঠাক হওয়ার জন্য দুইমাস পরপর সিন্ডিকেট হওয়া উচিত। তবে জানুয়ারির পর এতদিন কেনো সিন্ডিকেট সভা হয়নি তা আসলে আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, বর্তমানে উপাচার্য তো দেশে নেই, যখন ছিলেন তখন শিক্ষকরা কথাবার্তা বলে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করতে পারতেন কিন্তু তখন তাঁরা তা করেননি। এখন তো আমি উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে, আমি তো সভা আহ্বান করতে পারবো না। খুব সম্ভবত আগস্টের প্রথম সপ্তাহের দিকেই সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে।