ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি

ক্যাম্পাসগুলোতে কাটলো উত্তাল এক রাত, হলে ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা

ক্যাম্পাসগুলোতে কাটলো উত্তাল এক রাত, হলে ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো দেশ। ২০১৮ সালে সব ধরনের কোটা বাতিল করে জারি করা সরকারের পরিপত্র হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করার পর থেকে দেড় সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে শেষ কয়েকদিন রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন তারা। এবার এ আন্দোলনে নতুন রঙ চড়েছে চীন থেকে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা এক মন্তব্যে।

প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের অবমাননা করেছেন বলে দাবি কোটাবিরোধীদের। আর এ নিয়েই বিক্ষোভ মুখর এক রাত পার করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোটা ব্যবস্থার বিরোধিতাকারী শিক্ষার্থীদের মিছিল-স্লোগানে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাসগুলো, যাতে বাড়তি মাত্রা যোগ করে ছাত্রলীগের পাল্টা মিছিল-স্লোগান।

বিক্ষোভে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বলেছেন, অন্যায্য কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলায় তাদের অপমান ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অপমান করার অধিকার কারও নেই। তারা এই অবমাননার প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছেন।

রোববার (১৫ জুলাই) রাত দেড়টার দিকে এই বিক্ষোভ শেষে হলে ফেরে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রত্যাহারের দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীরা।

তারা বলেন, আজকে সংবাদ সম্মেলনে কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য আমাদের রক্তে আগুন ধরিয়েছে। যখন কারো রক্তে দাগ লাগানো হয়, তখন কেউ ঘরে বসে থাকতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী যদি তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন, তাহলে আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।

আন্দোলনরত শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থী আশরেফা বলেন, মেয়েরা হলে ফিরে গেছে। আমাদের হল, রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে গেছে।

হলে ফিরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলে, আমাদের প্রতিবাদ জানানোর ছিল। জানিয়েছি, অবস্থান নেওয়ার জন্য বের হইনি। অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়নি।

শিক্ষার্থীদের এ প্রতিবাদ মিছিলের বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এই বিক্ষোভ কর্মসূচি আমরা ডাকিনি। শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে হলের গেট ভেঙে এসে এই বিক্ষোভ করছেন।

এর আগে, রাত ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে দলবেঁধে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

এই প্রতিবাদ মিছিলে ‘চাইলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, সরকার সরকার’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

অবশ্য রাত ১টার দিকে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা হলে ফিরে গেলে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হয় ছাত্রলীগ। এসময় তারা মিছিল নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে এসে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এসময় তারা- ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘আছিস যত রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ফেসবুকে পদত্যাগ ঘোষণা করেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের চার নেতা পদত্যাগ। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের গণ যোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা উপ সম্পাদক রাতুল আহমেদ শ্রাবণ এবং কবি জসীমউদ্দিন হল ছাত্রলীগের দুই নেতা রাসেল হোসেন ও রাফিউল ইসলাম রাফি। কিছু সময় পরই অবশ্য পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আরেকটি পোস্ট করেন রাতুল আহমেদ শ্রাবণ। আর তাতে তিনি লিখেন, ‘পরিবার স্যরি, আমাকে মাফ করে দিয়েন।’

প্রসঙ্গত, আজ বিকেলে চীন সফর নিয়ে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না তো কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে? এটি দেশবাসীর কাছে আমার প্রশ্ন।

সরকারি চাকরি,কোটা,বিক্ষোভ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত