ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শিমুল কুম্ভকারসহ ৩ জনকে মাদকসহ আটক করা হয়েছে। তবে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ায় অভিযোগ উঠেছে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ-আল-মামুনের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আটককৃতরা হলেন চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শিমুল কুমার পাল (শিমুল কুম্ভকার)। বাকি দুইজন এই বিভাগের শিক্ষার্থী মো: রাইয়ান ও কারুশিল্প বিভাগের মো: আব্দুল আহাদ। তাদের আটকের পর শাহবাগ থানায় হস্তানান্তর করা হলে আজ বুধবার মুচলেকায় দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি এবং জরুরি সেবা ছাড়া অন্য যান চলাচল সীমিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনজন মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ দিয়ে রিকশা করে প্রবেশ করছিলেন। সেখানে দায়িত্বে থাকা প্রক্টরিয়াল টিম ও বিএনসিসির সদস্য তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তারা বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। দায়িত্বে থাকা বিএনসিসির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবীদেরকে 'উদ্যান থেকে পোলাপান এনে শুইয়ে দিবো' বলে হুমকি দেয়।
উদ্যানের কথা বলার পর তাদের তিনজনের আচরণ সন্দেহজনক হলে সেখানকার দায়িত্বরত পুলিশ ব্যাগ তল্লাশি করে মাদকদ্রব্য পায়। পরে তাদেরকে নিউমার্কেট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট সহ আরো কয়েকজন থানায় প্রবেশ করেন বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
উপস্থিত বিএনসিসির সদস্য ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধ্যাপক মামুন প্রবেশের পর তাদেরকে বলেন 'সে তো ছাত্র ইউনিয়নের বড় নেতা। এটা পলিটিক্যাল ইস্যু লেট মি হ্যান্ডেল দিস। তোমরা এই ঘটনা আর কাউকে বলবে না। তোমাদের মধ্যেই যেন থাকে।' এরপর তাদেরকে বের করে দেওয়া হয় এবং ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজনকে প্রবেশ করে। এসময় মাদকদ্রব্য পরিবর্তন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ জানায় তারা।
বিএনসিসির সদস্য আসিফ বলেন, যখন তাদের ব্যাগ থেকে পুলিশ মাদকদ্রব্য বের করে সেটি সবুজ পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় সাদা কালারের দুটি বোতল ছিল। এদিকে নিউ মার্কেট থানায় শাহবাগ থানা পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায় আটককৃতদের সাথে কালো পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় দুটি হান্টার বিয়ার পাওয়া গেছে।
সলিমুল্লাহ মুসলিমের হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, একজন শিক্ষার্থী আমাকে কল দিয়ে বললো তাদের থানায় নিয়ে আসা হয়েছে প্রক্টরকে কল করে পাচ্ছে না তারা। আন্দোলনের কারণে নানা স্টুডেন্টদের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছে। তারা আন্দোলনেও এক্টিভলি জড়িত। আমিও যেতে যেতে কল প্রক্টরিয়াল টিমকে কল করে পাচ্ছিলাম না। থানায় গিয়ে শুনি থার্টি ফাস্ট নাইট ইস্যু। তিন-চার মিনিট অবস্থানের পরে সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম আসার পর তাকে হ্যান্ডওভার করে চলে আসি।
ছাত্র ইউনিয়ন ও মাদক পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা পুলিশকে জিজ্ঞেস করেন, তারা বলতে পারবে। এখানে ছাত্র ইউনিয়ন, বিএনসিসি কোনো ইস্যু না। আমি বলেছি যারা এটার সাথে রিলেটেড তারা থেকে বাকিরা বের হয়ে যাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী আমাকে কল করেছে আমার মনে হয়েছে যাওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষার্থী সে শিবির, ছাত্রদল, ছাত্রলীগ হোক আমাকে কল করলে আমি যাবো৷
আজ বুধবার শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর, গতকাল রাতে তিন জনকে মাদকদ্রব্যসহ থানায় নিয়ে আসা হয় তারা সকাল পর্যন্ত ছিল। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও চারুকলা অনুষদের ডিন এসেছিলেন। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিবে এই আশ্বাসে তাদেরকে ডিন স্যারের কাছ ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডক্টর আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, গতকাল একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। তারা তাদের ভুল স্বীকার করেছে। পরবর্তীতে এমন কাজ করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে আসছে। ভুল স্বীকার এবং রানিং স্টুডেন্ট হিসেবে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমও চলমান আছে ফলে তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে কাউন্সেলিং করা হবে, আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। আমরা একাডেমিকভাবে ব্যবস্থা নিবো। সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যানদেরকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হবে।