রাবির ৫ হলে পোড়ানো হলো কোরআন

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:২৯ | অনলাইন সংস্করণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পাঁচটি আবাসিক হলে পবিত্র কোরআন মাজিদ পোড়ানোর ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। রবিবার (১২ জানুয়ারি) এসব হলে পোড়ানো কোরআন উদ্ধারের পর ছাত্রদের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ও ইসলামি ছাত্রশিবির বিক্ষোভ মিছিল বের করে। 

শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, “কোনো ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী এই ঘটনার মাধ্যমে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

হলের আবাসিক ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করার পর প্রতিদিনের মতো বুক সেলফ থেকে কোরআন নিয়ে তেলাওয়াত করতে গিয়ে ছাত্ররা দেখেন, দুটি কোরআন মাজিদের প্রথম দিকের দুটি সূরা এবং শেষের দিকের দুটি সূরা পোড়ানো। কোরআন দুটির হার্ড কভারসহ প্রথমে ও শেষের কিছু পৃষ্ঠা এবং মাঝখানের ৭০ শতাংশ মতো পৃষ্ঠা অক্ষত রয়েছে।

এ ছাড়া হলের তৃতীয় ব্লকের প্রথম তলার সিঁড়ি বরাবর এবং দ্বিতীয় ব্লকের ৪৩৪ নম্বর কক্ষের সামনের দেয়ালে পদ্মফুলের ছবি আকানো দেখা গেছে। পদ্মফুল ইসকনের প্রতীক এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নির্বাচনী প্রতীক। তাছাড়া ওই কক্ষের জানালায় ইসকন ইয়ুথ ফেস্টিভালের লিফলেট সাটানো দেখা গেছে। তবে কক্ষটি তালাবদ্ধ থাকায় কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে সৈয়দ আমীর আলী হলে একটি কোরআনের প্রথম দুই-তিন পারার মতো পুড়িয়ে হলের মুক্তমঞ্চে রাখা ছিল। সকালে সেটা দেখতে পান শিক্ষার্থীরা।

দুপুর ১২টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান ও সৈয়দ আমীর আলী হলে কোরআন পোড়ানোর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এর কিছু সময় পর শোনা যায় শহীদ হবিবুর রহমান, মতিহার ও মাদার বখ্‌শ হলেও কোরআন পোড়ানোর খবর পাওয়া যায়। 

শহীদ হবিবুর রহমান ও মতিহার হলের আবাসিক ছাত্ররা জানান, অন্যান্য হলে কোরআন পোড়ানোর খবর শুনে শহীদ হবিবুর রহমান হলের মসজিদের বুকসেলফে খোঁজ নিতে যান মসজিদের খাদেম মজিবুল ইসলাম। সেখান থেকে তিনি একটি পোড়ানো কোরআন উদ্ধার করেন। তবে কোরআনটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়নি। আর মতিহার হলের প্রথম ব্লকের ছাদে কাগজের ছাই দেখতে পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ছাইয়ের পাশেই কোরআন শরীফের কয়েকটি ছেড়া পাতা পড়ে ছিল।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, একসঙ্গে কয়েকটি হলে কোরআন পোড়ানোর এই ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, কোনো গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এটা করেছে। বিষয়টা অনেক হৃদয়বিদারক। এটি উসকানিমূলক ঘটনা হতে পারে। কোনো একটা গোষ্ঠী ক্যাম্পাসে দাঙা বাঁধানো বা ফ্যাসাদ তৈরি করার চেষ্টা করছে। তারা চাচ্ছে যে, একটা অশান্তি বা অরাজকতা তৈরি হোক। তদন্ত সাপেক্ষে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি তাদের।  

এ বিষয়ে আজ দুপুরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। কোরআনের অবস্থান প্রত্যেক মুসলমানের কাছে অনেক ওপরে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করব। পাশাপাশি হল প্রশাসন থানায় অভিযোগ জানাবেন। জড়িতদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব আমরা। তবে, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমরা বিশেষ আহ্বান জানাব, তারা যেন কোনো উসকানির ফাঁদে পা না দেন।

তদন্ত কমিটি গঠন: 

এই ঘটনা তদন্তে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দীন খানের সভাপতিত্বে এই কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন ও ৭ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটি গঠনের আগে উপাচার্য শৃঙ্খলা উপকমিটির সঙ্গে এক জরুরি সভায় ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করেন।