ঢাকা শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইবিতে নেই কেন্দ্রীয় গবেষণা ও পর্যাপ্ত বাজেট

ইবিতে নেই কেন্দ্রীয় গবেষণা ও পর্যাপ্ত বাজেট

স্বাধীন বাংলাদেশে‌ সরকারি উদ্যোগে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর প্রায় অর্ধশত বছর অতিবাহিত হলে গবেষণা খাতে উন্নয়ন নামমাত্র‌ই। ফলে অবকাঠামোগত দৃশ্যমান উন্নয়ন হলেও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে শিক্ষার উন্নয়ন হচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে গবেষণা খাতে অপর্যাপ্ত বাজেট আর নামমাত্র গবেষণা সেল নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ইবি।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হলো— নতুন গবেষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অবদান রাখা। এক্ষেত্রে ইবিতে শুধু অ্যাকাডেমিক ক্লাস ও পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীরা নামমাত্র গ্ৰেজুয়েশন সম্পন্ন করছে শিক্ষার্থীরা। আবার, আন্তর্জাতিক সূচক নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে র‌্যাংকিং করা হয় যেমন— শিক্ষাদান, গবেষণা, গবেষণা–উদ্ধৃতি (সাইটেশন), আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি (ইন্টারন্যাশনাল আউটলুক), ইন্ডাস্ট্রি ইনকাম (শিল্পের সঙ্গে জ্ঞানের বিনিময়) এগুলো খুব কমই মূল্যায়ন করা হয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সালে এডুর‌্যাংক–এর হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে ১৩তম, বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে ৩৬৬২তম ও ৩১টি গবেষণা বিষয়ে শীর্ষ ৫০ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করেছে। এই র‍্যাংকিং তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে। যেমন— রিসার্চ আউটপুট (এডুর‌্যাংক– এর সূচকে ৫,৫৫৭টি অ্যাকাডেমিক প্রকাশনা এবং ১৯,১৮৪টি উদ্ধৃতি বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়ী করা হয়েছে), অ-একাডেমিক খ্যাতি এবং ২ জন উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীর প্রভাব। এক্ষেত্রে গবেষণা খাতের দুর্বলতাকেই সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করেন শিক্ষক গবেষকরা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা রিসার্চ বাজেট দেয়া হয় যা সাধারণ ও বিশেষ নামে দুটি ভাগে দেওয়া হয়। সাধারণ বাজেটে ৯০ লাখ টাকা অনুমোদন হয় যা ৬২ জন শিক্ষক ও ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে দেয়া হয়। পরবর্তীতে, বিশেষ বাজেটে ১ কোটি ৯ লাখ টাকা অনুমোদনে শুধু ৬৮ জন শিক্ষককে দেয়া হয়। আবার, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা রিসার্চ বাজেট অনুমোদন দেয় যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৯ লাখ টাকা কম। এই অর্থবছরে সর্বমোট ৫০ জন শিক্ষক ও ৬৬ জন শিক্ষার্থীকে রিসার্চ বাজেটের জন্য উত্তীর্ণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা জামাল বলেন, ‘গবেষণায় যে বাজেট দেয়া হয় সেটা খুবই কম। তুলনামূলকভাবে আমাদের থেকে অনেক ছোট বিশ্ববিদ্যালয় ও জুনিয়র শিক্ষককেও এর তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি বাজেট দিচ্ছে। এ বছর গবেষণায় আমি বাজেট পেয়েছি এক লাখ সাতাশ হাজার টাকা। সত্যি বলতে, গবেষণার কিছু কেমিক্যাল ও ল্যাবের যন্ত্রপাতি কিনতে এর থেকে বেশি খরচ হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে নিজের মতো করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি থেকে অর্থ সংগ্রহ করি। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের গবেষণা আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ পায়; কিন্তু সেটা ইউজিসির কাছে রেকর্ড থাকে না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্ট্রালি একটা রিসার্চ সেল থাকা দরকার। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে সঠিকভাবে তদারকি করা হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফান্ড স্বচ্ছতা থাকা দরকার। যেমন— এক বছরে কত টাকা বাজেট দেয়া হলো এবং কত টাকা খরচ করা হলো। এছাড়াও রিসার্চ সংক্রান্ত ফাইল অনেক দেরিতে ক্লিয়ারেন্স দেয় যেটা আরো অনেক দ্রুত হওয়া উচিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়াও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা অনুযায়ী এ বছর একটা প্রফেসরকে ফান্ড দেয়া হলে পরবর্তী বছর সেই প্রফেসরকে ফান্ড দেয়া হয় না। একজন প্রফেসর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রজেক্ট শেষ না করতে না পারলে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয় না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকিব মো. নসরুল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেকটা ফ্যাকাল্টি ও বিভাগকে বলেছি, তারা আবেদন করলে আমরা রিসার্চ সেল করব। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ প্রকাশনা হয়; কিন্তু সেটা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে অবগত করানো হয় না। আমি চেষ্টা করব প্রকাশনাগুলোকে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে পাঠাতে। এছাড়াও আগামী বছর থেকে রিসার্চের বাজেট বাড়ানো হবে।’

বাজেট,গবেষণা,ইবি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত