ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকার প্রাকৃতিক উপায়

প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩, ১৫:২১ | অনলাইন সংস্করণ

আমাদের নিত্য ব্যবহার্য শব্দগুলোর মধ্যে এখন ডায়াবেটিস শব্দটি বেশ কমন হয়ে পড়েছে। কেননা, ডায়াবেটিস যেন এখন মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। দেখা যাবে যে আমাদের আশেপাশেরই কারো না কারো ডায়াবেটিস আছে। শুধু বয়স্ক নয়, তরুণরাও ডায়াবেটিসের শিকার হচ্ছে এবং এর কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ছে। 

ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরনের। টাইপ ১ ডায়াবেটিস ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না অথবা উৎপন্ন হলেও সঠিকভাবে কাজ করে না। কিন্তু ডায়াবেটিসের লক্ষণ বুঝতে পারলে ঘরোয়া উপায়ে এর প্রতিকার সম্ভব।

ডায়াবেটিসের সাধারণ কিছু লক্ষণ হল- ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া, অনেক বেশি তেষ্টা, ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা, কাটা স্থান বা ক্ষত শুকোতে সময় লাগা এবং ঝাপসা দৃষ্টি।

প্রতিদিনের অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, মাত্রাতিরিক্ত ফাস্টফুড, চিনি, কার্বোহাইড্রেট খাওয়া, মদ পান, ধূমপান- এসবই কিন্তু বাড়িয়ে দেয় ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা। যে কারণে ডায়াবেটিসের সমস্যায় আগেই যেমন রাশ টানতে হবে জীবনযাত্রায় তেমনই খাদ্যাভ্যাসেও আনতে হবে পরিবর্তন।

ওষুধের ব্যবহার ছাড়া শুধুমাত্র ব্যায়াম, খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। চলুন জেনে নেয়া যাক কী খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

পেঁয়াজ

ব্রিটিশ ওয়েবসাইট এক্সপ্রেসের ডায়াবেটিস সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পেঁয়াজ খাওয়া রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে সস্তা এবং কার্যকর পদ্ধতি। পেঁয়াজের নির্যাস রক্তে শর্করার পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমাতে পারে। পেঁয়াজের নির্যাস, অ্যালিয়াম সিপা এবং মেটফরমিন ডায়াবেটিসকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মার্কিন গবেষণা পত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে। মেটফরমিন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত বেশি ব্যবহৃত একটি ওষুধ। এই গবেষণার গবেষক জানিয়েছেন, পেঁয়াজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সস্তা এবং সহজলভ্য জিনিস।

নয়ন তারা উদ্ভিদ

ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে নয়নতারা ফুলের গুরুত্ব অপরিসীম। নয়ন তারা গাছের ফুল ও মূল, শুকনো হলে ১ গ্রাম আর কাঁচা হলে ২ গ্রাম এক সঙ্গে করে মাঝারি মাপের ১ কাপ পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পানিটা ছেঁকে ফুটিয়ে অর্ধেক কাপ করে নিন। এবার ওই পানি অর্ধেক করে সকাল ও রাতে পান করুন। দিন দশেক ব্যবহারের পর পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কয়েক দিনের মধ্যেই ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া এবং অন্যান্য উপসর্গগুলোও কমে গিয়ে নিয়ন্ত্রণে আসবে ডায়াবেটিস অসুখ ।

পনির ফুল

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অব্যর্থ হিসেবে কাজ করে পনির ফুল। প্রাকৃতিক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, পনির ফুল একটি বন্য প্রজাতির ফুল, যা সোলান পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফুলটি শরীরে ইনসুলিনের আরও ভাল ব্যবহারের জন্য অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলোকে সারিয়ে তুলতে কাজ করে। যদি এটি প্রতিদিন অল্প পরিমাণে গ্রহণ করা হয় তবে এটি ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি ব্যবহার করা খুবই সহজ। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে একটি গ্লাসে ১০ থেকে ১২টি ফুল রেখে সারা রাত রেখে দিন। তারপর এই পানি ছেঁকে সকালে খালি পেটে পান করুন। 

করলা

করলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কারণ এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে পারে। ইনসুলিনের নিঃসরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে করলা। দুই বা তিনটি করলার বীজ ফেলে দিয়ে রস বের করে নিন। করলার রসের সঙ্গে পানি মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান।

দারচিনি

যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য দারচিনি খুবই উপকারী। এটি অগ্নাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করে এবং রক্তের সুগার লেভেল কমায়। দারচিনির গুঁড়া চা, পানি বা অন্য পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে পান করতে পারেন।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা জেলে ফাইটোস্ট্যারলস নামক শক্তিশালী উপাদান থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইটোস্ট্যারলসের অ্যান্টিহাইপার গ্লাইসেমিক প্রভাব আছে যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য উপকারী। হলুদ, তেজপাতা ও অ্যালোভেরা জেল পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুবার পান করুন।

আমপাতা

৩-৪ টি আম পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে এই মিশ্রণটি খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে। আমপাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে রাখতে পারেন। দিনে দুবার আধা চামচ করে এই আমপাতার গুঁড়ো খেতে পারেন।

মেথি

ডায়াবেটিসের সবচেয়ে ভালো একটি প্রতিকার হচ্ছে মেথি। ২ টেবিল চামচ মেথি বীজ ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। সকালে মেথি বীজসহ পানি পান করুন। মেথি বীজের জৈব উপাদান ইনসুলিনকে উদ্দীপিত করে। এছাড়াও এতে উচ্চ মাত্রার ফাইবার থাকে বলে স্টার্চকে গ্লুকোজে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে যা ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের সাহায্য করে।

চর্বিযুক্ত মাছ

চর্বিযুক্ত মাছের তালিকায় রয়েছে স্যালমন, সার্ডিন, হেরিং ইত্যাদি মাছ। যে সব মাছ ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড পূর্ণ, যে সব মাছ ডিএইচএ এবং ইপিএ-এর বড় উৎস সে সব মাছই পারে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এছাড়াও নিয়মিত এই সব মাছ খেলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কিন্তু কমে যায় অনেকটাই। এছাড়াও এই সব খাবারে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভাল।

ডুমুর

পুষ্টিবিদের মতে, ডায়াবেটিসের রোগীদের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে ডুমুর। ডুমুরের মধ্যে ফাইবারের পরিমাণ বেশি। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রিসার্চ ইন ফার্মেসি অ্যান্ড বায়োসায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, ডুমুরে হাইপোগ্লাইসেমিক উপাদান রয়েছে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন, ডুমুর পাতা ইনসুলিন প্রতিরোধের উন্নতিতেও উপকারী।

শরীরচর্চা

শরীরচর্চা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই একটা মাত্র রোগেই আমরা শরীরচর্চা বা ব্যায়ামকে ওষুধ হিসাবে দেখে থাকি। কারণ একজন ডায়াবেটিসের রোগী যখন হাঁটতে শুরু করেন বা ব্যায়াম করতে শুরু করেন তখন তার শরীরের ইনসুলিন এর কার্যকারিতা কমে যায়। তখন তার নিজের দেহের ইনসুলিন নিজের দেহে বেশি করে কাজ করতে শুরু করে। প্রতিটি কোষগুলো তখন ইনসুলিনের প্রতি সেনসিটিভ হয়ে যায়। তখন আপনাকে নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হবে না।