‘বায়োলজিকে প্রিমিয়াম বয়োলজি বানানোর কারিগর’
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ১৯:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে সবেমাত্র ভর্তি হওয়া ছেলেটি, মা-এর চিকিৎসার অর্থ যোগান দিতে দিনে ২-৩টা কোচিং-এ ঘুরে ঘুরে ক্লাস নিয়ে এবং পাবলিক বাসে ঝুলে ঝুলে টিউশনি করতে করতে পরিচিত হলো বায়োলজির শুভ্র ভাইয়া হিসেবে। ছোট সময়েই বাবা হারানো, ২০২১ সালে মা-ও তাকে ছেড়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন । সব হারিয়ে এতিম ছেলেটি বায়োলজি ওঁ তার স্টুডেন্টগুলোকে তার জীবনটা সঁপে দিয়ে আজকে দেশের অনলাইন এডুকেশন জগতের অন্যতম পরিচিত মুখ, শেখ হাসনাত জামান শুভ্র। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের এডুকেশনে বায়োলজি সাবজেক্টে এসেছে অত্যাধুনিকতার ছোঁয়া, তার একান্ত প্রচেষ্টায় সমৃদ্ধ বায়োলজির স্টুডিও ল্যাব, আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বয়োলজি ক্লাস এখন সকল ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে জনপ্রিয়। স্টুডেন্টদের কাছে তিনি পরিচিত প্রিমিয়াম টিচার হিসেবে।
করোনার সময় থেকেই তিনি অনলাইন টিচিং-এ পুরোপুরি মননিবেশ করেন, ২০২১ সালেই ইউটিউবে ফ্রি ক্লাস নেয়ার মাধ্যমে স্টুডেন্টদের কাছে বিনামূল্যে পৌঁছে দেন কোয়ালিটি ক্লাস কন্টেন্ট। এরপর তিনি তার মতো আরও কয়েকজন তরুণ শিক্ষককে নিয়ে তৈরি করেন ACS Group নামের অনলাইন ভিত্তিক এডুকেশন প্লাটফর্ম।
করোনার সময় অনেকেই যখন ভাবত এই পেন্ডেমিক চলে যাওয়ার পরে অনলাইন এডুকেশন টিকবেনা, তখন শুভ্র এবং তার সহকর্মিরা বিশ্বাস করতেন অনলাইন এডুকেশন আরও বিস্তার হবে।
তবে শুভ্র ভাইয়ার ক্লাস গুলো সচরাচর বায়োলজি ক্লাসের মতো নয়। বায়োলজি সাবজেক্টটা সচরাচর স্টুডেন্টদের কাছে মুখস্থ নির্ভর বিষয় বলে রয়ে গিয়েছে।তাদের কাছে বায়োলজি মানে কঠিন কঠিন নাম ও তথ্য না বুঝে মুখস্থ করা। এই ধারনা থেকে ছাত্রদের বেড় করে নিয়ে আসার জন্য নিরলশ কাজ করে যাচ্ছেন হাসনাত শুভ্র। বায়োলজিকে বাস্তব উদাহরণ দিয়েই পড়ান তিনি।রুইমাছ, সাইকাস, নগ্নবীজী ও আবৃতবীজী, টিস্যু ইত্যাদির মতো কঠিন টপিক গুলো যেখানে সচরাচর স্টুডেন্টরা চিত্র একে পড়েন , শুভ্র সেগুলোকে পড়ান বাস্তবভাবে দেখিয়ে। কি নেই তার স্টুডিও ল্যাবে? মাইক্রোস্কোপ থেকে শুরু করে ল্যাব স্পেসিমেন ও স্লাইড সবই নিয়ে আসেন তার অনলাইন ক্লাসে। লাইভ ক্লাসে মাছ কেটে কেটে বিভিন্ন অংশ দেখিয়ে পড়ান। শুভ্র ভাইয়ার ক্লাসেই দেখা যায় কিভাবে রুইমাছের হৃদপিণ্ড স্পন্দন করছে।
এসব নিয়ে শুভ্র ভাইয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সারা দেশ যেখানে সবাই এন্টারটেইনমেন্ট ভ্লগ দেখা নিয়ে ব্যাস্ত, সেখানে আমি তৈরি করতে চেয়েছি বাংলায় সর্বপ্রথম বোটানি নিয়ে ভ্লগ। নগ্নবীজী উদ্ভিদের একটি টপিক রয়েছে সাইকাস, সেই সাইকাস উদ্ভিদকে দেখানোর জন্য আমি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাইকাস গাছের কাছে ১৭ বার গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং তারপর তৈরি করেছি একটি ভিডিও কন্টেন্ট। যেই বিষয়গুলো এতদিন ছিল বইয়ের পাতায় সেগুলোকেই আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি রিয়েল লাইফে দেখানোর জন্য। টেকনোলকজিকে বায়োলজি লার্নিংয়ের সাথে কীভাবে যুক্ত করা যায় এটাই আমার সার্বক্ষণিক চিন্তা-ভাবনা।
ইউটিউবে শুভ্রর ক্লাসে প্রায়ই দেখা যাবে তিনি থ্রিডি এনিমেশন অথবা সরাসরি বাস্তব গাছপালা এনে ক্লাস নিচ্ছেন। কোষের সূক্ষ্ন সূক্ষ্ন অঙ্গানুগুলো শিক্ষার্থীরা এখন ভিজুয়ালাইজ করতে পারছে উনার ক্লাস দেখে। পাশাপাশি থিউরি পড়ানোর সময়ও তিনি চেষ্টা করেন সবথেকে সহজ উদাহরণ তুলে ধরার। কখনো গল্পের মাধ্যমে কিংবা কখনো বাস্তব উদাহরণ, শুভ্রর চেষ্টা বায়োলজিকে স্টুডেন্টদের কাছে সহজবোধ্য করা। বর্তমানে উনার ইউটিউব চ্যানেলে আছে প্রায় আড়াই লাখ সাবস্ক্রাইবার। চ্যানেলটি বায়োলজি সহ পড়াশুনা সংক্রান্ত সহায়ক ভিডিও দ্বারা পরিপূর্ণ। যাতে ছাত্র ছাত্রীরা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর বায়োলজির সবগুলো অধ্যায়ের ক্লাস ভিডিও পেয়ে যাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
শুভ্রর ইচ্ছা বায়োলজি বিষয়টি নিয়ে আরও বিষদ কাজ করা, যাতে স্টুডেন্টরা এই সাবজেক্টটাকে ভয় না পেয়ে আনন্দের সাথে গ্রহণ করে এবং পড়াশুনার মাঝে আনন্দ খুজে পায়।তার বিশ্বাস,"নানান ধরনের এক্সপেরিমেন্ট এবং রিয়েল লাইফ লার্নিং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আরও বাস্তবমুখী হয়ে উঠবে। টেকনোলজি এবং ইন্টারনেট যেভাবে সহজলভ্য হচ্ছে সেখানে এখনই সময় শিক্ষার আধুনিকায়নের।"
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেহেতু টেকনোলজি মুখি হচ্ছে, বহির্বিশ্বের টেকনোলজির সাথে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরাও যাতে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে এটাই বায়োলজির অনলাইন শিক্ষক হাসনাত শুভ্র-র লক্ষ্য।