সেনা নিহতের ঘটনায় রাশিয়ায় ক্ষোভ, কমান্ডারদের শাস্তি দাবি

প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:২১ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন সংস্করণ

মস্কোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউক্রেনের মাকিভকাতে অস্থায়ী সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত রুশ সেনার সংখ্যা বেড়ে ৮৯-তে দাঁড়িয়েছে। নববর্ষের প্রথম প্রহরে এত এত রুশ সেনার মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে রাশিয়ার মানুষ। সেনা নিহতের ঘটনায় কমান্ডারের শাস্তি দাবি করেছে কয়েকজন আইনপ্রণেতা ও জাতীয়তাবাদী রুশ নাগরিক। 


এদিকে মস্কো বলছে, রুশ সেনাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে শত্রু পক্ষ হামলাটি চালাতে পেরেছে। দেশটি বলছে, এর মধ্য দিয়েই শত্রু পক্ষ রুশ সেনাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছে। উল্লেখ্য, সেনাদের ফোন ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। 


১ জানুয়ারি (গত ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে) দোনেস্ক অঞ্চলের মাকিভকাতে ইউক্রেনীয় বাহিনী একটি কারিগরি কলেজের ওপর হামলা চালায়। কলেজটিকে রুশ সেনারা অস্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল। বুধবার ভোরে এক টেলিগ্রাম পোস্টে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, হামলায় রেজিমেন্টের উপ-কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল বাচুরিনও নিহত হয়েছেন। হামলার ঘটনাটি নিয়ে একটি কমিশন তদন্ত করছে বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।


রাশিয়ার কয়েকজন আইনপ্রণেতা ও জাতীয়তাবাদী রুশ নাগরিক অভিযোগ করেছেন, কমান্ডাররা বিপদকে অবহেলা করেছেন এবং নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিল। হামলায় এ পর্যন্ত ৮৯ সেনার মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে মস্কো। যুদ্ধ শুরুর পর এক হামলায় এই প্রথম এত বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে। রাশিয়ার সামরিক ব্লগার আরকেঞ্জেল স্পেটনাজ মাকিভকায় হামলার ঘটনাকে ভয়াবহ উল্লেখ করে বলেছেন, একটি ভবনে বিপুলসংখ্যক সেনা রাখা ঠিক হয়নি। নিরাপত্তার বিষয়ে কমান্ডারদের আরও সজাগ থাকা উচিত ছিল।


রুশ সমালোচকরা বলছেন, মাকিভকায় রুশ সেনাদেরকে রাখা হয়েছিল একটি গোলাবারুদের ডিপোর কাছে। সেই ডিপোতেই ইউক্রেনীয় বাহিনীর ছোড়া যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৪টি হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে বলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।


রুশ সামরিক ব্লগার আরকেঞ্জেল স্পেটনাজ এক টেলিগ্রাম পোস্টে বলেন, ‘এত বিপুল সেনাকে এক জায়গায় সমাবেশ করার ধারণা কার মাথা থেকে বের হয়েছে? এমনকি একজন বোকাও জানে যে, তাদের ওপর কামান হামলা হলে অনেকেই আহত বা নিহত হবে।’


রুশ আইনপ্রণেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রুশ সিনেটের সদস্য ও সাবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রিগরি কারাসিন কেবল যে ইউক্রেন ও এর নেটো মিত্রদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের দাবি তুলেছেন তাই নয়, দায়িত্বে অবহেলা করা কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করতে তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন।


রাশিয়া বলছে, সেনাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। তারপরও তাদের অনেকেই তা ব্যবহার করেছেন। আর এর জন্যই হামলা সম্ভব হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনীয় গোলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে, এমন এলাকায় রুশ সেনাদের ব্যাপক হারে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে যে এ ধরনের হামলা সম্ভব হয়েছে, তা ‘ইতিমধ্যে নিশ্চিত’।


এর মধ্য দিয়ে শত্রু পক্ষ রুশ সেনাদের অবস্থান শনাক্ত করে এটিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্যবস্তু করতে পেরেছে। বিবৃতিতে রুশ কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, তদন্তে যেসব কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত হবেন, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। ভবিষ্যতে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।


হামলার সময় কারিগরি কলেজটি রুশ সেনাদের উপস্থিতিতে ভরপুর ছিল। গত সেপ্টেম্বরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের আংশিক সেনা নিযুক্তির ঘোষণা অনুযায়ী যে ৩ লাখ রিজার্ভ সেনাকে (আপৎকালীন মজুদ সেনা) তলব করা হয়েছিল, তাদের অনেকেও সেখানে ছিলেন।