আরব সাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ আজ সন্ধ্যায় ভারতের গুজরাটের কুচ, সৌরাষ্ট্র বিভাগে আঘাত হানতে পারে। তবে এটি ভারতের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের করাচিতে সরাসরি কোনো আঘাত হানবে না। উপকূল অতিক্রম করার সময় ১৫০ কিলোমিটার বেগে বইবে ঝড়। ওই সময় ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ স্থলভাগে প্রবেশ করবে এবং উত্তর দিকে অগ্রসর হবে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দফতর।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে সর্বশেষ বুলেটিনে ভারতের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় আরব সাগরে জাখাউ বন্দর (গুজরাট) থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে জাখাউ বন্দরের কাছে মান্ডভি এবং করাচির মধ্যে সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ এবং পার্শ্ববর্তী পাকিস্তান উপকূল অতিক্রম করবে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গুজরাটসহ ভারতের পশ্চিম উপকূলের সমুদ্র ইতোমধ্যে উত্তাল হয়ে উঠেছে। শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। উপকূল এলাকাগুলোতে বহু ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশ কিছু এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
‘বিপর্যয়’ এর জেরে গুজরাটের উপকূল এলাকায় অনেক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গুজরাটগামী অথবা গুজরাট থেকে রওনা দেওয়ার কথা ছিল এমন ৯৫টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। বেশ কিছু ট্রেনের গতিপথ সংক্ষিপ্ত করেছে ভারতীয় রেল। এর ফলে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
গুজরাটে ঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাহত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থাও। গত দু’দিনে উপকূল এলাকা থেকে ৩৭ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গুজরাটের উপকূলে মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৭টি দল এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১২টি দল। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন তারা।
ভারতের মৌসুম ভবন জানিয়েছে, বিপর্যয়ের জেরে গুজরাটের কচ্ছ, দ্বারকা, পোরবন্দর, জামনগর, মোরবি, জুনাগড় এবং রাজকোটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ওই এলাকার কাঁচা বাড়িগুলো মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে পাকা বাড়িতেও। ইতোমধ্যে এলাকায় অনেক বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে ঝোড়ো হাওয়ায়। ফলে বিদ্যুৎ পরিষেবা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। উপড়ে গিয়েছে বহু গাছও।
সৌরাষ্ট্র, দ্বারকা এবং কচ্ছে লাল সতর্কতা জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া দফতর। তারা জানিয়েছে, আরব সাগরে এই মুহূর্তে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রূপে অবস্থান করছে ‘বিপর্যয়’। মঙ্গলবার সকালে তার কিছুটা শক্তিক্ষয় হয়েছিল। এই কারণে অতি প্রবল থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে এই ঝড়। ‘বিপর্যয়’ ক্রমে উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব দিকে এগোচ্ছে এবং গুজরাটের মান্ডবী এবং পাকিস্তানের করাচির কাছে বন্দরের উপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে। তখন হাওয়ার গতিবেগ থাকবে ১২৫-১৩৫ কিলোমিটার। তা ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ভারতের আটটি রাজ্যে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। গুজরাট ছাড়াও সতর্কতা জারি হয়েছে কেরাল, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গোয়া, দমন ও দিউ, লক্ষদ্বীপ এবং দাদর ও নগরহাভেলিতে। মঙ্গলবার থেকেই মুম্বাইয়ে ‘বিপর্যয়ের’ কারণে জলোচ্ছ্বাস দেখা গেছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে সমুদ্র। মৎস্যজীবীদের আপাতত সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় নিয়ে সতর্ক অবস্থা গ্রহণ করেছে পাকিস্তান। দেশটির সিন্ধ প্রদেশ সরকার করাচির সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকদের সরিয়ে নিয়েছে।
সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ বলেছেন, একটি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ৮০ হাজারের বেশি লোককে সরিয়ে নিতে কাজ করছে সেনাবাহিনী।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মসজিদ এবং রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে আদেশ জারি করা হচ্ছে। -সূত্র: এনডিটিভি ও ডন