ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জলবায়ু বিপর্যয়

ঝুঁকিতে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা

ঝুঁকিতে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে একের পর এক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, এবং মেরু অঞ্চলের সমুদ্রে বরফস্তর যে রেকর্ড গতিতে ভাঙছে তাতে রীতিমত শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা। আর জলবায়ু বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। দীর্ঘস্থায়ী তাপ্রবাহ, দাবানল, খরা, অতিবর্ষণ ও বন্যার কারণে কৃষি উৎপাদনও হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে রাশিয়া-ইউক্রেনের শস্যচুক্তি অকার্যকর, চাল রপ্তানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ইতোমধ্যে ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা।

এমন তথ্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের সরকারি থিঙ্কট্যাংক সংস্থা চ্যাথাম হাউসের খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগ। চ্যাথাম হাউসের খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের বিশেষজ্ঞ টিম বেনটন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে বলেন, খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির একটি বড় কারণ বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি। এই মুহূর্তে আমরা মূল্যস্ফীতিজনিত ভোগান্তির শিকার।

সংস্থাটি বলছে, মূল্যস্ফীতি সমস্যা মিটে গেলেও বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হবে না। বর্তমানে খাদ্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে, এই বৃদ্ধির গতি হয়তো কমে আসবে। তবে ধীরে ধীরে বাড়বে খাদ্যপণ্যের দাম। কেননা জলবায়ু বিপর্যয়জনিত কারণে ক্রমাগত বিশ্বজুড়ে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোর কৃষি উৎপাদনের বিপর্যয় গোটা ইউরোপের জন্যই অশনি সংকেত। কারণ এই অঞ্চলের দেশগুলোই ইউরোপের অন্যান্য দেশের সবচেয়ে বড় খাদ্য যোগানদাতা।

ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ কৃষি নির্ভর দেশ ইতালির কৃষকদের সংগঠন কলদিরেত্তি ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে, টানা তাপপ্রবাহ ও খরার কারণে গত বছর দেশটির কৃষিতে ৬৭০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ইউরোপের ফল ও গমের বাজারে বড় সরবরাহ আসে ইতালি থেকে। কলদিরেত্তিতে কর্মরত কৃষি অর্থনীতিবিদ লরেঞ্জো বাজ্জানা জানান, চলতি বছর টানা তাপপ্রবাহের কারণে আঙুর, তরমুজসহ বিভিন্ন ফলের ক্ষেত প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। মধু এবং গমের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

ব্লুমবার্গকে লরেঞ্জো বাজ্জানা বলেন, গত কয়েক দশকের মধ্যে এত গরম আমরা দেখিনি। সবাই পরামর্শ দিচ্ছে— তাপমাত্রা সহনশীল ফসল চাষ করতে, কিন্তু এত দ্রুত ও নাটকীয়ভাবে কী ফসলের নতুন জাতের উদ্ভাবন সম্ভব?’

এদিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে ধানের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে এশিয়ায়। ভারতের অভ্যন্তরেও বেড়েছে চালের দাম। রাজধানী দিল্লির খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাল গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। দেশজুড়ে এই বৃদ্ধির হার গড়ে ৯ শতাংশ।

এছাড়া খরার কারণে এশিয়ার বৃহৎ চাল উৎপাদনকারী দেশ থাইল্যান্ডের সরকার কৃষকদের দুই মৌসুমের পরিবর্তে এক মৌসুম ধান চাষের পরামর্শ দিয়েছে।

তাপপ্রবাহের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ চীন। চীনের প্রেসিডেন্ট শনিবারের এক বক্তৃতায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারি কর্মকর্তাদেরকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আর চীনের সরকার কৃষকদের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ধান কাটার নির্দেশ দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে যে পরিমাণ গম উৎপন্ন হয়েছে— তা গত ৩ দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন চালের দাম গত ১১ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। গত ১৭ জুলাই শস্য চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়া সরে দাঁড়ানোর পর গত ৬ দিনে বিশ্ববাজারে গমের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর গ্রীষ্মকাল শুরু হতে না হতেই জলবায়ু বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কোনো কোনো অঞ্চলে শুরু হয়েছে দীর্ঘ টানা তাপপ্রবাহ- খরা, আবার কিছু অঞ্চলে অতিবর্ষণজনিত কারণে বন্যা শুরু হয়েছে।

এসব বিপর্যয় ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে বৈশ্বিক কৃষি উৎপাদনের ওপর। টানা তাপপ্রবাহের কারণে দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোতে দুধ-ডিমের উৎপাদন হচ্ছে কম, টমেটো ও অন্যান্য সবজি ক্ষেতগুলোতে রীতিমতো বিপর্যয় নেমে এসেছে। গমের উৎপাদন হয়েছে বিগত বছরের তুলনায় অনেক কম।

বর্তমানে ইউরোপ-এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির জেরে ভোজ্যতেল, মাংস, চিনি, দুধ, ডিম প্রভৃতি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য কিনতে হিমসিম খাচ্ছেন বিশ্বের কোটি কোটি সীমিত আয়ের মানুষ।

বিশ্ব,ঝুঁকি,খাদ্য
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত