শান্তির বার্তা ইয়েমেনে : মধ্যপ্রাচ্যের দ্বন্দ্ব কি শেষ হতে চলেছে

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১৬:২৭ | অনলাইন সংস্করণ

সংঘাত জড়িয়ে পরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন। বছরের পর বছর চলা সংঘাতে প্রাণহানি ঘটেছে ৫ লক্ষাধিক মানুষের। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মারা গেছে যুদ্ধের কারণে ঘটা খাদ্যাভাব ও রোগের কারণে। তবে সম্প্রতি এই যুদ্ধ বন্ধে কিছু বাস্তব আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

সৌদি আরব এবং আনসারুল্লাহ (যারা হুতি নামেও পরিচিত), তারা এখন সামনাসামনি বসছে এবং সংকট নিরসনে আলোচনা করছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে সৌদি-ওমানি উচ্চপর্যায়ের দুটি প্রতিনিধি দল সানা সফর করে। এই সফর সৌদি এবং হুথিদের মধ্যে একটি আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করে। তবে একই সঙ্গে এই অঞ্চলের অন্যান্য শক্তিগুলোকেও এই আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে হবে।

রিয়াদকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আলোচনাগুলোতে ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার, রাষ্ট্রপতির নেতৃত্ব কাউন্সিল (পিএলসি) এবং আনসারুল্লাহ হুতিসহ সব পক্ষের প্রতিনিধিত্ব থাকে।

শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি রোডম্যাপের আলোকে ইয়েমেনের আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মধ্যে সংলাপ অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূতের মাধ্যমে এখানে সমন্বয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের কাছে এ কারণে ঋণী যে, তারা বর্তমান শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যা কিছু করা সম্ভব তার সবই করার চেষ্টা করেছে। যদিও নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইয়েমেনিদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


২০২২ সালের এপ্রিলে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির সময় গত অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলেও তারা এখনও সেটা টিকিয়ে রেখেছে। সংঘাত বন্ধে যা ছিল অন্যতম একটি পদক্ষেপ।

জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় শুরু হওয়া সেই যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি সহিংসতা হ্রাস এবং ইয়েমেনজুড়ে মানবিক কার্যক্রম উন্নত করতে অনেক সহযোগিতা করে। তিন কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার দেশটির অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল৷

যদিও আবারও পূর্ণ মাত্রায় সহিংসতা শুরুর একটি সত্যিকার সম্ভাবনা রয়েই গেছে। কিন্তু সব পক্ষেরই এই যুদ্ধবিরতিকে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা ইয়েমেনে একটি স্থায়ী ও পরিপূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

যদিও সব পক্ষ আলোচনার টেবিলে বসে একটি পূর্ণাঙ্গ সমঝোতায় পৌঁছানো সময়ের ব্যাপার। কিন্তু সেখানে ২ কোটির বেশি মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তার মরিয়া প্রয়োজন এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে তা অব্যাহত রাখতে হবে। মৌলিক পরিষেবা প্রদানের জন্য একটি উপায় হতে পারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা।

শান্তি প্রক্রিয়ায় নারী, যুব প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজসহ সব প্রভাবকদের অবশ্যই যোগদান করতে হবে এবং সবার পরামর্শ নিতে হবে যাতে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান সামনে আসে। সবার প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে ইয়েমেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একটি সংলাপের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আরও বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক বছরের বিরোধ শেষে গত মার্চে ইরান ও সৌদি আরব তাদের কূটনৈতিক দূরত্ব ঘোচানোর ব্যাপারে সম্মত হয়। দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক দূতাবাসগুলো নতুন করে চালুর ব্যাপারেও সমঝোতা হয়। চীনের বেইজিংয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সহায়তায় চুক্তিটি হয়েছিল। এমনকি সৌদি বাদশাহ সালমান ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে সৌদি সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন।