আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে আজ মঙ্গলবার। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২০ বছর যুদ্ধের পর তালেবানরা আফগানিস্তানে আবার ফিরে আসে।
দুই বছরে আফগানদের সঙ্গে আলাপচারিতা শেষে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো জানায়, আতঙ্ক আর হতাশার জাল ছেয়ে আছে পুরো আফগানজুড়ে। তবে তালেবান আসার পর সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন দেশটির বিচার বিভাগের কর্মীরা। প্রাণ হারানোর শঙ্কায় গুটিয়ে আছেন রাজধানী কাবুল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আইনজীবীরা। উঠতে-বসতে মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার উকিল ও বিচারক।
দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর নাজিয়া মাহমুদির বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি, তোলো নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৪ হাজার সরকার পক্ষের উকিল (প্রসিকিউটর) ও বিচারক আফগানিস্তানে তালেবানদের সহিংসতার হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। গত দুবছরে ২৮ জন উকিল ও তাদের পরিবার নিহত হন।
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন বলা হয়, উকিলরা বিশেষ করে যারা তালেবান সদস্যদের তদন্ত ও বিচার করেছেন তাদের জীবন গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে আছে। অনেকে আত্মগোপনেও আছেন। প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত দেয় তালেবান দ্বারা মুক্তপ্রাপ্ত অপরাধীরা উকিল ও বিচারকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করছে।
২০২১ সালের আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে ক্ষমতায় আসে। তারপর থেকে জেলে বন্দি থাকা তালেবানদের মুক্তি দিতে শুরু করেন। যাদের ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস আগে দোষী সাব্যস্ত করে বন্দি করা হয়েছিল। অপরাধীরা জেল থেকে বের হয়ে প্রতিশোধ নিতে চান। তখন থেকেই মৃত্যুভয়ে জীবন পার করছেন প্রসিকিউটর ও আইনিকর্মীরা।
তাদের মধ্যে একজন সারা (নিরাপত্তার খাতিরে নাম পরিবর্তন করা হয়)। বয়স ২৮। ছিলেন আফগান অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের প্রায় ৬ হাজার কর্মীদের মধ্যে একজন। হত্যা, ধর্ষণ ও জোরপূর্বক বিয়েসহ নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের ২ হাজারেরও বেশি মামলায় কাজ করেন। তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর মামলাগুলো বাতিল করা হয়।
সারা গার্ডিয়ানকে জানান, দোষী সাব্যস্ত করা সব অপরাধীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কারণ, অপরাধীরা ছিলেন তাদেরই অংশ। তারপর থেকেই তাকে ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
মাহমুদি বলেন, তালেবানদের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় দখলের পর যেসব পুরুষ ও মহিলা আইনজীবী, প্রসিকিউটর ও বিচারক কাজ করতেন তাদের সেখান থেকে বের করে দেয়া হয়। আমাদের কর্মীরা অপরাধীদের কাছে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আফগানিস্তানের স্বাধীন আইনি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
তালেবানদের ক্ষমতায় আসা নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে নারীদের জীবন। বন্ধ করে দেয়া হয় তাদের স্বাধীনতা। স্কুল, কলেজে যাওয়ার পথ বন্ধ হওয়া থেকে শুরু করে বন্ধ হয়ে যায় তাদের আয়ের পথ। মেয়েদের জীবন ছাড়াও বিষিয়ে উঠেছে কৃষকদের জীবন। তালেবান ক্ষমতায় আসায় বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক সাহায্য বন্ধ হওয়ার পর সংকটে পড়ে দেশটি।