লিবিয়ায় বন্যায় প্রাণহানি ৫ হাজার ছাড়াল, ত্রাণ পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৯ | অনলাইন সংস্করণ
আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে সোমবার আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও প্রবল বৃষ্টিপাতের প্রভাবে দারনা শহরের কাছে নদীর দুটি বাঁধ ধসে পড়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। আর এই বন্যায় দারনা শহর পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঝড় ও বন্যায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ৫ হাজার ৩০০ মানুষ। নিখোঁজ রয়েছেন কয়েক হাজার।
এদিকে, লিবিয়ার বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ওষুধ ও শুকনো খাবারসহ ত্রাণ সামগ্রী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম হতাহতের খবর জানিয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, পুরো দারনা শহরই ভেসে গেছে। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরটির অ্যাম্বুলেন্স সোসাইটি জানিয়েছে, শুধুমাত্র দারনা শহরেই ২ হাজার ৩০০ লোক নিহত হয়েছেন। দারনার এক উদ্ধারকারী জানিয়েছেন, সেখানকার হাসপাতালগুলোতে এখন আর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া মর্গগুলোও মৃতদেহে ভরে গেছে।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারেক আল খারাজ জানিয়েছেন, ভয়াবহ এই বন্যার পানিতে ডুবে বা ভেসে গিয়ে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি হয়েছে ৫ হাজার ২০০ লোকের। এই মন্তব্যের কিছু সময় পর আরও ১০০ লোকের প্রাণহানির খবর এসেছে।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট এর ভাষ্য মতে, বন্যায় ১০ হাজার লোককে সমুদ্রের দিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
বাড়ি-ঘর ও রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অঞ্চলটির বাসিন্দারা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যাও। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার বরাতে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে দেশটির বেনগাজি, সোসি, আল বায়দা, আল মারজ এবং দেরনা শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বন্যার পানি সরে গেলেও উপকূলীয় শহর দেরনায় পানির স্তর বিপৎসীমার ১০ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাঁধের পানির কারণে সৃষ্ট বন্যা হাজার হাজার মানুষকে সমুদ্রের দিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সেই বন্যাটিকে অনেকে সুনামির মতো আখ্যায়িত করেছেন। সমুদ্রের পানিতে যেসব মানুষ ভেসে গেছেন তাদের মরদেহ পানি থেকে উদ্ধার করতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, এই ভয়াবহ বিপদে যারা পড়েছেন তাদের যে উদ্ধার করা হবে সেই পরিস্থিতিও এখন লিবিয়ায় নেই। কারণ ২০১১ সালে সাবেক শাসক কর্নেল মোহাম্মদ গাদ্দাফিকে হত্যার পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখে পড়ে দেশটি। আর তখন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশটিতে শুধুমাত্র যুদ্ধই চলেছে। ফলে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে- বিপর্যয় পরবর্তী বিষয়াবলী যে সামাল দেওয়া হবে এমন কোনো বাহিনী বা অবকাঠামোই তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া গাদ্দাফির পতনের পর গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে যায় লিবিয়া। এর ফলে বর্তমানে দেশটি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এখন পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল আলাদা আলাদাভাবে শাসিত হয়ে আসছে। আর বিভক্তির কারণে কেন্দ্রীয় ও সমন্বিত কোনো উদ্ধার অভিযানও সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় প্রাণহানির ঘটনায় তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে চলছে অভিযান। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্কুল কলেজ ও দোকানপাট। এছাড়াও দেশটির প্রধান চারটি বন্দর সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশসহ বন্যা কবলিত লিবিয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন জানান, দেশটির দুর্গত মানুষের জন্য বাংলাদেশ ওষুধ ও শুকনো খাবারসহ ত্রান সামগ্রী পাঠাচ্ছে । পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বাংলাদেশের সি-১৩০ এয়ারক্রাফট শিগগিরই ঢাকা থেকে যাত্রা করবে বলে জানা গেছে।